অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতা ও অপকারিতা

অর্জুন গাছের পাতা পেয়ারা গাছের পাতার ন্যায়। কিন্তু অর্জুন গাছের পাতা পেয়ারা পাতার চেয়ে অনেক বড়। অর্জুন গাছের বৈজ্ঞানিক নাম হল টার্মিমিনেলিয়া অর্জুনা।প্রধান ওষধি গাছের মধ্যে একটি অন্যতম গাছ হল অর্জুন গাছ।

অর্জুন-গাছের-ছালের-উপকারিতা ও অপকারিতা

অর্জুন গাছের ছাল,বাকল,পাতা,ফল সব ওষধি গুণ সম্পন্ন। অর্জুন গাছের ছাল পাউডার,ডিকোশন ,স্কুর ইতাদি হিসাবে ব্যবহার হয়। তাই আমাদের অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানা প্রয়োজন।

পোস্ট সুচিপত্রঃ অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতা ও অপকারিতা 

অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতা  

  • অ্যাজমাঃ অর্জুন পাউডার ১২ গ্রাম ক্ষীর বা পায়েসের সাথে খেলে অ্যাজমা আক্তান্ত রোগীর অ্যাজমা ভাল হবে।
  • রক্তপিত্তঃ আমাদের মাঝে মাঝে কারনে অকারনে রক্ত পড়ে। সেক্ষেত্রে গাছের ছাল সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে খেলে উপকার হবে।
  • জ্বরঃ জ্বর হলে আমরা অর্জুন গাছের ছাল খেতে পারি। অর্জুন ছাল সারারাত ১ পোয়া পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে খেলে জ্বর কমে যাবে।
  • ক্ষত বা ঘাঃ শরীরের কোন স্থানে ক্ষত বা ঘা হলে অর্জুনের ছাল গুড়া করে পানির সাথে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে ক্ষতে লাগালে ক্ষত তারাতারি সেরে যাবে।
  • ফোঁড়াঃ ফোঁড়া হলে অর্জুন গাছের পাতা দিয়ে ফোঁড়াটা ঢেকে রাখলে ফোঁড়া ফেটে যায়।আর পাতার রস দিলে ফোঁড়াটা শুকিয়ে যায়।
  • কানে ব্যাথাঃ অর্জুন গাছের কচি পাতার রস কানের ভিতরে দুই ফোঁটা দিলে কানের ব্যথা ভালো হয়।
  • হজমের উন্নতিঃ অর্জুন গাছের ছালের রস বদহজম, কোষ্ঠকাঠিন্য এবং পেটের ফোলাভাব দূর করে।
  • হাড়ের উন্নতিঃ অর্জুনের ছাল বা বাকল হাড়কে মজবুত করে।নিয়মিত অর্জুন গাছের ছালের রস পান করলে হাড়ের ক্ষয় রোধ করে।

অর্জুন ছাল হৃদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপ কমায় 

অর্জুন গাছের ছাল বেশ উপকারি ও ভেষজও ওষুধ বলে প্রমানিত হয়েছে। অর্জুন গাছের ছালের রস নিয়মিত পানে হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় এবং হৃদপিণ্ডের পেশিকে শক্তিশালী করে।হৃদপিণ্ডের রক্ত সঞ্চালন  নিয়ন্ত্রন করে। অর্জুন গাছের বাকল লিপিড টাইগ্লিসারাইড স্তর হ্রাস করার মাধ্যমে রক্তের কোলেস্টেরল হ্রাস করে। 

অর্জুন গাছের ছালের রস নিয়মিত পান করলে হার্ট অ্যাট্যাঁকের ঝুঁকি কমায়। এটি পান করার মাধ্যমে বন্ধ ধমনী এবং কোলেস্টেরল মাত্রা কমবে | অর্জুন গাছের ছালের পাউডার এক চামচ পরিমাণ নিয়ে 2 ক্লাস পানি মিশিয়ে দিতে হবে পানিটুকু অর্ধেক হয়ে এলে ঠান্ডা করতে হবে এবং সকালে খালি পেটে সন্ধ্যায় নিয়মিত পান করলে রক্তের কোলেস্টেরল কমবে

চুলের যত্নে অর্জুন গাছের ছাল

 সুন্দর চুলের জন্য আমরা অর্জুন গাছের ছাল ব্যবহার করতে পারি। অর্জুন গাছের ছাল এবং  হেনার মিশ্রণ চুলে লাগালে চুল কালো করে অনেকের অল্প বয়সে চুল সাদা হয়ে গেছে বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল যুক্ত চুল কালো করার তেল বা শ্যাম্পু ব্যবহার করেও আশানুরূপ ফল পাচ্ছেন না তারা অর্জুন গাছের ছাল ও হেনার মিশ্রণ চুলে লাগালে চুল হবে কালো একই সাথে চুল অনেক শক্তিশালী হবে

 অর্জুন গাছের ছাল প্রাকৃতিক ভাবে চুলের গোড়াকে মজবুত কর।অর্জুন গাছের ছালে  অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট , ফ্লাভোনয়েড , টানিনস এবং মিনারেল রয়েছে যা চুলের গোড়া কে মজবুত করতে সাহায্য করে।  অর্জুন গাছের ছাল নিয়মিত ব্যবহারে চুল পড়া কমে চুলের দুর্বলতা দূর হয় নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। 

 অর্জুন গাছের ছাল খুশকি ও ফাঙ্গাল দূর করতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। চুলের গোড়ায়  ম্যালাসেজিয়া ফাঙ্গাস নামক ব্যাকটেরিয়া থাকে যা চুলের গোড়ায় সংক্রমণ  ঘটিয়ে চুলের গোড়ায় খুশকি তৈরি করে। অর্জুন গাছের ছাল ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে  খুশকি মুক্ত করে এবং চুলের  পুনরুদ্ধারের সাহায্য করে।

কাশি উপশমে অর্জুন গাছের ছাল 

 কাশি নিরাময়ের জন্য অর্জুন গাছের ছাল খাওয়া যেতে পারে। অর্জুন গাছের ছাল এবং বাসক পাতার রস একসাথে মিশিয়ে দিয়ে আবার শুকিয়ে নিন সাতবার এইভাবে শুকিয়ে নিন এরপর গুঁড়ো করে নিন।  গুড়ো গুলোর সাথে মধু বা মিছরি  দিয়ে রোগীকে খেতে দিন। এতে করে কাশি কমবে।

তাছাড়া অর্জুন গাছের ছালের রস এবং তুলসী পাতা রস একত্রে করে  খাওয়ালে কাশি কমবে। দুই রস একত্রে করে মধু বা মিছরি অথবা দুধের সাথে রোগীকে খাওয়ালে  কাশির উপশম হবে। তবে বেশি খাওয়ালে সমস্যা হতে পারে।

মেদ বা ভুঁড়ি কমাতে অর্জুনের ছাল

আজকাল মেদ বা ভুঁড়ি একটি কমন সমস্যা। প্রায় 80%  মানুষের সমস্যা আছে। যারা মেদভুঁড়ি কমানোর জন্য হাটাহাটি এবং বিভিন্ন ধরনের ব্যায়াম করেন তারা একবার হলেও অর্জুন গাছের ছাল খেয়ে দেখবেন। এত তাড়াতাড়ি মেদ ভুঁড়ি কমবে যে আশ্চর্য হয়ে যাবেন।

অতিরিক্ত  মেদ নিয়ে যারা ভোগান্তির শিকার তারা অর্জুন গাছের ছালের  সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রেখে  ছেঁকে নিয়ে সকালে খালি পেটে এবং সন্ধ্যায়  নিয়মিত পান করলে দ্রুত কাজ করে যে, এক মাসের মধ্যেই এর ফলাফল দেখতে পাবেন। অর্জুনের ছাল মেটাবলিজম বাড়ায় যা চর্বি পোড়াতে  পেটের চর্বি পোড়াতে সহায়তা করে। এটি ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে এবং অতিরিক্ত খাওয়া থেকে বিরত রাখে  যা মেদ কমানোর কার্যকর উপায় । 

প্রসাবের বাধা দূর করতে অর্জুনের ছাল ব্যবহার

আমরা যারা পানি কম পান করি বা কাজের চাপের কারণে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি খেতে পারি না তার কারণে প্রসাবে বাধা সৃষ্টি হয় এবং জ্বালাপোড়া করে। আমরা যদি অর্জুন গাছের ছাল দিয়ে পানীয় তৈরি করে  খাই তাহলে আমাদের এই সমস্যা দূর হতে পারে। অর্জুন গাছের ছাল থে তো করুন এবং দুই কাপ সমপরিমাণ পানি নিশান। মেশানো পানি  ফুটান। যতক্ষণ না পানিটি অর্ধেক হয়ে আসে অর্ধেক হয়ে আসলে ঠান্ডা করুন এবং  রোগীকে  পান করান। দিনে একবার খাওয়ানো হলেও এটির প্রভাব সারাদিন থাকে এবং প্রসাবের সমস্যা দূর হয় ।

 ত্বকের যত্নে অর্জুনের ছাল

ত্বকের জন্য অর্জুন গাছের ছাল  বেশ উপকারী। প্রাচীনকাল থেকে ত্বকের যত্নে অর্জুনের ছাল ব্যবহার হয়ে আসছে। অর্জুনের ছালের রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, এন্টি ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান থাকে  যা ত্বকের বিভিন্ন সমস্যার  সমাধান করে। অর্জুনের ছাল প্রাকৃতিক হওয়ায় এটি ত্বকের জন্য নিরাপদ। অর্জুনের ছাল ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়।  এটি ত্বকের সেলের রিজেনারেশন করে এবং ত্বকের কালচে দাগ ও  অসামঞ্জস্য দূর করে। অর্জুনের ছাল প্রাকৃতিক স্কাবিং হিসেবে কাজ করি।


অর্জুন গাছের ছাল  আন্টি ব্যাকটেরিয়াল ও  এন্টিসেপটিক  এবং আন্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান সমৃদ্ধ হওয়ায় মুখের ফুসকুড়ি,ব্রণ ও  ইনফেকশন দূর করতে সাহায্য করে। মুখের তৈলাক্ত ভাব দূর করে। যে ব্যাকটেরিয়ার জন্য মুখে ব্রণ হয়  সে ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে। ব্রণের সমস্যা দূর করে  এবং মুখের যাবতীয় যেমন  র‍্যাশ, বলিরেখা, বয়সের ছাপ , ডার্ক  সার্কেল দূর  দূর করতে কার্যকরী  ভূমিকা রাখে। তাছাড়া অর্জুন ছালের গুড়া এবং মধু একত্রে মিশিয়ে দিলে খুব তাড়াতাড়ি ব্রণ ভালো হয়ে যায়। এমনকি মেছতা দূর করতে অনেক  কার্যকরী ।

মুখে ফোস্কার চিকিৎসা

যাদের মুখে ফোস্কার রয়েছে তারা অর্জুনের ছাল ব্যবহার করতে পারেন। অর্জুনের ছাল ব্যবহার করলে ফোসকা দূর হতে পারে। মিশ্রণটি তৈরি করতে অর্জুনের ছালের গাছের গুড়া ও নারকেলের তেল একসাথে মিশিয়ে আপনার মুখে ফোসকার উপর প্রলেপ দিন। পরপর কয়েকদিন লাগালে আপনি ফোসকার কষ্ট থেকে মুক্তি পাবেন।  তাছাড়া অর্জুন গাছের ছালের গুড়া ও গুড় মিশিয়ে খেলে জ্বর ভালো হয়।

অর্জুন গাছের পুষ্টি

অর্জুন গাছের পুষ্টিগুণ বলে শেষ করা যাবে না। কোথায় আছে বাড়িতে একটি অর্জুন গাছ থাকা আর ডাক্তার থাকা  একই কথা। অর্জুন গাছের ছাল, পাতা , ফল ঔষধি গুণে ভরপুর। একটা মানুষের বাহ্যিক এবং অভ্যন্তরীণ সকল রোগের চিকিৎসায় অর্জুন গাছ ব্যবহার করা যেতে পারে।  
অর্জুন-গাছের-ছালের-উপকারিতা ও অপকারিতা
অর্জুন গাছের ছাল প্রাকৃতিক উপাদান ও  বায়ো এক্টিভ  যৌগ সমৃদ্ধ , যা শরীরের জন্য অত্যন্ত কার্যকরী। এটিতে রয়েছে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়া্‌ম , আয়রন , টানিন,ফ্লাভোনয়েট  এবং অন্যান্য পুষ্টি  উপাদানে সমৃদ্ধ। এটি হৃদ রোগ প্রতিরোধ, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, ত্বকের উজ্জলতা্ বৃদ্ধি , চুলের  সমস্যার সমাধান, ওজন কমানো এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। 

 আইরন - 4%
  •  হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি করে 
  •  অক্সিজেন সরবরাহ করে
  •  রক্তস্বল্পতা  প্রতিরোধ করে
  ক্যালসিয়াম - 15%
  •  হাড় এবং দাঁতের জন্য উপকারী
  •  রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে
  ম্যাগনেসিয়াম- 5%
  •  নিদ্রাহীনতা দূর করে
  •  ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে 
  •  হৃদপিন্ডের স্বাস্থ্য ভালো করে
  পটাশিয়াম -5%
  •  হৃদরোগ ও স্ট্রোক প্রতিরোধ করে
  •   রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে
  •  পেশীর সংকোচন কার্যকারিতা ঠিক রাখে
   গেলিক অ্যাসিড-  3%
  •  ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়
  •  অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণ সম্পন্ন
  •  রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
 এলাজিক এসিড- 2%
  •  ত্বকের কোলাজেন বৃদ্ধি করে
  •  বয়সের ছাপ দূর করে
  •    ত্বককে টানটান করে
  কোয়ারসেটিন- 3% 
  •  শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা শরীরের  ইমিউন সিস্টেম কে শক্তিশালী করে 
  •  এলার্জি প্রতিরোধ করে
  •  ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক
  ট্যানিন- 2০- 25%
  •  অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে
  •  ত্বক এবং চুলের সুস্থতার সহায়ক 
  •  অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি ফাংগাল  গুন থাকার কারণে এটি সংক্রমণ প্রতিরোধ করে

অর্জুন গাছের ছাল খাওয়ার নিয়ম 

অর্জুন গাছের ছাল ভিজিয়ে খাওয়ার আয়ুর্বেদ ও প্রাকৃতিক চিকিৎসার জনপ্রিয় পদ্ধতি। প্রাচীনকাল থেকে অর্জুন গাছের ছাল ব্যবহার হয়ে আসছে।  অর্জুন গাছ শরীরের বিভিন্ন যেমন উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরল ,  হজমশক্তি, হাড় ক্ষয় , ত্বকের  সমস্যা  দূর করতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। তাহলে চলুন অর্জুন গাছের ছাল খাওয়ার নিয়ম জেনে  নিই।

প্রথমে  অর্জুন গাছের ছাল টুকরো টুকরো করে কেটে নিতে হবে। তারপর পরিষ্কার পানি দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে। একটি পরিষ্কার পাত্রে  পানি নিয়ে অর্জুনের ছাল গুলো ভিজিয়ে রাখুন। সারারাত (৮-১০ ঘন্টা) ভিজিয়ে রাখুন , ভেজানো টুকরো আর পানি একত্রে ১০-১৫ মিনিট সেদ্ধ করুন। পানিগুলো ঠান্ডা হলে ছেকে নিন এবং নিয়ম করে ফানি গুলো পান করুন। ভালো ফলাফল পেতে সকালে ও রাতে খেতে পারে। সাধারণত সকালে খালি পেটে পানীয়গুলো  পান করলে আশানুরূপ ফল পাওয়া যায়

সতর্কতাঃ  যাদের রক্তচাপ স্বাভাবিকের নিচে তারা এ পানিও পান করলে হিতে বিপরীত হতে পারে।   বেশি পরিমাণে অর্জুন গাছের ছাল বা নির্যাস গ্রহণে গ্যাস্ট্রিক বা অস্বস্তি হতে পারে। গর্ভবতী ও স্তন্যপায়ী নারীদের জন্য কোন প্রকার ব্যবহারে প্রতি হতে পারে। তাই ব্যবহারের আগে চিকিৎসকের শরণাপন্ন   হোন। 

 অর্জুন ছাল কোথায় পাওয়া যাবে

অর্জুন গাছ কোথায় পাওয়া যায় এ সম্পর্কে বলতে গেলে , আমরা যে  অর্জুনের  উপকারিতা  বিভিন্ন  ব্যবহার সম্পর্কে আলোচনা করলাম কিন্তু এটি কোথায় পাওয়া যায় সেটা যদি না জানি তাহলে এর ব্যবহার আমাদের পক্ষে কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। চলুন জেনে  নিই  অর্জুন গাছের ছাল কোথায় পাওয়া যায় 
  •  অর্জুন গাছের ছাল গুড়ো হিসেবে পাওয়া যায়। অর্জুন গাছের ছাল আপনি বিভিন্ন হাটে  বাজারে  এবং হোমিও ঔষধ বিক্রয় কেন্দ্রগুলোতে সহজে পেতে পারেন।
  •  ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসালয় গুলোতে অর্জুনের ছাল বিক্রি করে থাকে। ঢাকা ,চট্টগ্রা্‌ম , নারায়ণগঞ্জ ও ইউনানী মেডিসিন কেন্দ্রগুলোতে সহজে পেয়ে যাবেন।
  •  শহরে বড় বড় সুপারশপে ও অনলাইন ই-কমার্স শপে ঘরে বসে খুব সহজে অর্জুনের ছাল বা গুড়ো পেয়ে যাবেন ।
  •  গ্রামে গঞ্জে ফেরি করে ফেরিওয়ালা বিভিন্ন গাছ-গাছড়ার ঔষধ বিক্রি করে থাকে তাদের কাছেও পেতে পারেন।
  •   কিছু ফার্মেসি বা হারবাল মেডিসিন সপে আপনারা অর্জুন ছাল পেতে পারেন।

চুলকানি বা এলার্জি

চুলকানিতে অর্জুন গাছের ছাল সরাসরি ব্যবহারের উল্লেখ পাওয়া যায়নি। তবে অর্জুন গাছে ট্যানিন থাকায় এটি ত্বকের প্রদাহ কমায়। অর্জুন গাছের বাকুল থেকে আহরিত  ট্যানিন মুখ , জিহ্বা , মাড়িয়ে প্রদাহ কমে। কিন্তু এর রস বাহ্যিক ব্যবহার করা যেতে পারে।

 অর্জুন গাছের ছালের অপকারিতা

অর্জুন গাছের ছালের বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা জন্য পরিচিত হলেও , এর  মাত্রারিক্ত ব্যবহার অপকারিতা বয়ে আনে।  অর্জুন গাছের ছাল হূদরোগ , উচ্চ রক্তচা্‌প , ওজন কমায় , চুল ও ত্বকের যত্নসহ নানা উপকারিতা প্রদান করে। তবে  এটি ক্ষেত্রে বিশেষে ক্ষতিকর হতে পারে । চলুন তবে অর্জুন গাছের ছালের  অপকারিতা সম্পর্কে কিছু আলোচনা  করা যাক-

অতিরিক্ত  গ্রহণে পেটের সমস্যা- পরিমাণের চেয়ে বেশি পরিমাণ অর্জুন গাছের ছাল বা নির্যাস গ্রহণ করলে গ্যাস্ট্রিক বা পেটের অস্বস্তি হতে পারে ।

রক্তচাপ কমিয়ে দিতে পারে- অর্জুনের ছাল উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সহায়তা করে। কিন্তু যাদের স্বাভাবিকের চেয়ে কম  রক্তচাপ আছে , তারা এটি খেলে ব্লাড প্রেসার আরো বেশি কমে যেতে পারে। এতে করে শরীর দুর্বল , অবসর , কান্তি এবং জ্ঞান হারানোর সম্ভাবনা থাকে । আপনি যদি ব্লাড প্রেসারের ওষুধ খান তাহলে অর্জুন গাছের ছাল খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। যদি লো ব্লাড প্রেসার থাকে তাহলে অর্জুন গাছের ছাল খাওয়া থেকে বিরত থাক।
অর্জুন-গাছের-ছালের-উপকারিতা ও অপকারিতা
এলার্জির সমস্যা হতে পারে- অনেক মানুষের ক্ষেত্রে অর্জুন গাছের ছাল নিরাপদ হলেও , কিছু ক্ষেত্রে এলার্জির কারণ  হতে পারে। ত্বকে  চুলকানি , র‍্যাশ বা  লালচে  হয়ে যেতে পারে । প্রথমবার ওজন সাল ব্যবহার করলে অল্প পরিমাণ নিয়ে ব্যবহার করে পর্যবেক্ষণ করুন যদি সমস্যা দেখা দেয় সাথে সাথে ব্যবহার করা বন্ধ করুন।

মূত্রতন্ত্রের সমস্যা- দীর্ঘমেয়াদে  অতিরিক্ত অর্জুনের ব্যবহার কিছু মানুষের ক্ষেত্রে মূত্রতন্ত্রের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

স্তন্যদায়ী নারীদের ক্ষেত্রে সাবধানতা- গর্ভবতী বা স্তন্যদায়ী নারীদের জন্য অর্জুন গাছের কোন প্রকারের ব্যবহারে ক্ষতি হতে পারে। তাই গর্ভবতী ও স্তন্যদায়ী নারীরা অর্জুন ছাল খাওয়ার আগে ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়ে পরামর্শ নেওয়া  উচিত।

রক্তে শর্করার মাত্রা কমিয়ে দিতে পারে-   অর্জুন ছাল ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।  যারা ডায়াবেটিসের ওষুধ খান বা ইনসুলিন গ্রহণ করেন , তারা যদি অর্জুন গাছের ছাল খান তাহলে বিপদজনকভাবে রক্তের শর্করা মাত্রা কমিয়ে দিতে পারে। তাই এটি গ্রহণের আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

কিডনির ওপর চাপ ফেলতে পারে- অর্জুন ছাল উপকারী হলেও , মাত্রারিক্ত সেবন করলে কিডনির কার্যক্ষমতা কমে যেতে পারে। যাদের কিডনি  ডিজিজ রয়েছে বা কিডনিতে  পাথর(স্টোন)  আছে তারা অর্জুন গাছের ছাল খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।

শেষ কথা  অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতা ও অপকারিতা

অর্জুন গাছের  একটি প্রাকৃতিক ভেষজ গুণসম্পন্ন ঔষধি উদ্ভিদ। এটি আমাদের  শারীরিক সমস্যা সমাধানের সহায়ক। সঠিক নিয়মে ও  পরিমাণমতো খেলে স্বাস্থ্য উন্নয়ন, হৃদযন্ত্রের  স্বাস্থ্য সুস্থ রাখে , রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ  করে , ওজন কমাতে সাহায্য করে, চুল ও ত্বকের  যত্ন, শরীর ডিটক্সিফাই করে। কিন্তু এর মাত্রারিক্ত ব্যবহার শরীরে ক্ষতির প্রভাব পড়ে ।   তাই তাই অর্জুন গাছের ছাল ব্যবহারের আগে  চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করুন।

আমার এই পোস্টে  অর্জুন গাছের ছালের  উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি । আশা করি  পোস্টটি  পড়ে উপকৃত হবেন। অর্জুন গাছের ছাল সমস্যার সমাধানের সহায়ক হলেও বেশি মাত্রায় ব্যবহার করলে বিপদজনক হতে পারে।  বিশেষ কোন সমস্যার কারণে আপনি যদি কোন ওষুধ খেয়ে থাকেন তাহলে  অর্জুন গাছের ছাল খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং সুস্থ থাকুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
1 জন কমেন্ট করেছেন ইতোমধ্যে
  • Online Jatra
    Online Jatra September 26, 2025 at 11:14 AM

    thank

মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ফকটেক ২৪ এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন

comment url