আদা চাষের জন্য ১০টি সেরা পদ্ধতি

 আদা চাষের জন্য ১০টি সেরা পদ্ধতি জেনে আপনিও আদা চাষে আগ্রহী হবেন। আদা একটি মসলা জাতীয় খাবার। যা আমরা খাবারে প্রতিদিন ব্যবহার করে থাকি। আজকে আর্টিকেলে আদা চাষ সম্পর্কিত সকল তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করবো।

আদা-চাষের- জন্য-প্রয়োজনীয়-উপকরণ-সম্পর্কে জানুন

আদা একটি মসলা জাতীয় খাবার হলেও এর উপকার কিন্তু অনেক। আদা চাষ করা সম্পর্কিত অনেক অজানা তথ্য আছে সেগুলো এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনাদের সাথে শেয়ার করব। আশা করি আর্টিকেলটি পড়ে আপনাদের উপকারে আসবে।

পোস্ট সূচিপত্রঃ আদা চাষের জন্য ১০টি সেরা পদ্ধতি

আদা চাষের জন্য ১০টি সেরা পদ্ধতি

আদা একটি মশলা জাতীয় খাবার যা প্রতিদিন প্রতিনিয়ত ব্যবহার হয়ে আসছে। কিন্তু অনেক চাষিরা আছে যারা আদা চাষ করে থাকেন কিন্তু  তারা অনেকেই জানেন না যে অনেক উপায়ে আদা চাষ করে  লাভবান হওয়া যায়। আদা চাষের জন্য মাটির গুনাগুন, পানির ধারন ক্ষমতা, রাসায়নিক সার, জৈব সার ইত্যাদি ব্যবহার করে বাম্পার ফলন ঘরে তোলা যায়। 

আদা চাষ করার প্রথমেই মাটি বাছাই করে নিতে হবে। কেননা অনেক মাটি আদার জন্য ক্ষতিকর। এতে লাভের আশা আদা চাষ করে দেখা যায় ক্ষতি হয়ে যায়। আদা চাষের জন্য উপযুক্ত উঁচু মাটি, দোআঁশ,বেলে দোআঁশ  সুনিষ্কাশিত জমি প্রয়োজন। আদার চারা রোপণের উপযুক্ত সময় হলো ফাগুন থেকে বৈশাখ মাস(মার্চ-এপ্রিল) উত্তম সময়। আধার চারা লাগানোর আগে জীবাণুমুক্ত করে নিতে হবে। জীবানুমুক্ত করতে ডাইথেন এম-৪৫ ব্যবহার করে বীজ শোধন করতে হবে।

জমিতে আদা চাষ পদ্ধতি

আদা চাষের জন্য জমিতে ৪-৬ টি চাষ দিয়ে দিতে হবে। প্রথম চাষ অনেক গভীর থেকে দিতে হবে। পানি নিষ্কাশনে ভালো উচু -মাঝারি উঁচু জমি, দোআঁশ,বেলে দোআঁশ মাটিতে ভালো আদা চাষ করা যায়। আদা চাষ করতে জমিকে বেড আকারে করে নিতে হবে। এতে গাছে পানি দিতে ভালো হয়। এক বেড থেকে আরেক বেডের দূরত্ব ২০ সেন্টিমিটার, মানে দুই বেডের মাঝখানে যে নালা থাকবে সেই নালার হবে ২০সেন্টিমিটার। আর একটা চারা থেকে আরেকটা চারা দুরুত্ব ১০ সেন্টিমিটার।

বীজ রোপনের সময় 

আদার বীজ লাগানোর সঠিক সময় হল ফাল্গুন থেকে বৈশাখ মাস (মার্চ-এপ্রিল) উত্তম সময়।৪০-৫০  গ্রাম  বিশিষ্ট ১-২টি কুড়ি বিশিষ্ট কন্দ লাগাতে হবে। আদার বীজ লাগানোর সময় ৫-১০ সেন্টিমিটার গভীরে রোপণ করতে হবে। চারা থেকে যারা দূরত্ব ২০ থেকে ২৫ সেন্টিমিটার এবং সারি থেকে সারি দূরত্ব ২৫ থেকে ৩০ সেন্টিমিটার। প্রতি হেক্টরে বীজ লাগে ১০০ কেজি।

আদা চাষে সার প্রয়োগ

সারের নাম শতক প্রতি সার হেক্টর প্রতি সার
কম্পোস্ট ২০-৪০ কেজি ১০টন
ইউরিয়া ১.২কেজি ৩০০ কেজি
টি এস পি ১.১ কেজি ২৭০কেজি
পটাশ ১কেজি ২৩০ কেজি
জিপসাম ৫০০গ্রাম ১১০ কেজি
দস্তা ১০০ গ্রাম ২.৫ কেজি

বস্তায় আদা চাষ পদ্ধতি

বর্তমানে আধুনিক ভাবে আদা চাষ বলতে বস্তায় আদা চাষ করা বোঝায়। বস্তায় আদা চাষ করলে আলাদা কোন জমির প্রয়োজন হয় না। বাড়িতে পড়ে থাকা সিমেন্টের বস্তা আলুর বস্তা এগুলো দিয়ে বাড়িতে বসেই আদা চাষ করা যায়। এতে কষ্ট কম হয় এবং লাভবান হওয়া যায়। যেসব এলাকায় আদা চাষ হয় সেগুলো এলাকায় দেখা যায় বন্যা হয়ে ফসলের ক্ষতি হয়ে যায়। বস্তায় আদা চাষ করলে মাটি বাহিত রোগ থেকে যেমন রক্ষা পায় ঠিক তেমনও বন্যার হাত থেকেও রেহাই পাওয়া যায়।

বস্তায়-আদা-চাষের- জন্য-প্রয়োজনীয়-উপকরণ-সম্পর্কে-জানুন
বাড়ির উঠোনে, ছাদে, প্রাচীর ঘেঁষে বস্তা রেখে খুব সহজে আদা চাষ করা যায়। যেখানে খুশি সেখানে চাষ করা যায়। ছায়াযুক্ত স্থান হলেই হবে। গ্রামে দেখা যায় অনেক জায়গায় বাঁশতলা ফাঁকা থাকে। জায়গাটি সবসময় পড়েই থাকে। তাই আপনি বাঁশতলায় ছায়াযুক্ত স্থানে আদা চাষ করলে বাড়তি কোন জমি লাগে না। 

প্রথমে মাটিকে ঝুরঝুরাকরে নিতে হবে। বস্তার ভিতরে মাটি যেন ফেপে থাকে এই জন্য গোবর, ছাই মেশাতে হবে। পরিমাণ মতো হাড়ের গুঁড়ো ও গোবর যোগ করতে হবে মাটি তৈরি হয়ে এলে বস্তায় পড়তে হবে । ১০ থেকে ১৫ গ্রামের একটি গন্ধ নিয়ে পাঁচ থেকে ছয় সেন্টিমিটার গড়ে পুঁতে দিন। এবার পানি দিয়ে দিন, যদি পারেন তাহলে বস্তা ঢাকা দিয়ে রাখুন কারণ বস্তার আদ্রতা থাকবে  ৫-৭ দিন। 

আদা চাষের বিস্তারিত আলোচনা

একটি বস্তায় তিন ঝুড়ি মাটি, এক ঝুড়ি বালু, এক ঝুড়ি পচা গোবর সার ও ২৫ গ্রাম ফিউরাডন দিতে হবে। বালি পানি নিষ্কাশনে সাহায্য করে, আর ফিউরাডন উইপোকার উপদ্রব থেকে রক্ষা করে। মাটির সঙ্গে গোবর,বালি ও ফিউরাডন ভালোভাবে মিশিয়ে সিমেন্টের বস্তায় বা আলুর বস্তায় ভরে ঝাঁকিয়ে নিন। তাতে মিশ্রণটি ভালোভাবে চেপে যাবে। আলাদা একটি বালি ভর্তি বস্তায় তিন টুকরো অঙ্কিত আদা পুঁতে দিন। ২০ থেকে ২৫ দিন পর ওই আদা থেকে গাছ বের হবে। তখন আদা  সবখানে তুলে বস্তার মুখে তিন জায়গায় বসিয়ে দিতে হবে। দু-তিন মাস পর বস্তায় মাটি গুলো আলগা করে দিতে হবে।

বস্তায় আদা চাষ করলে তেমন কোন আগাছা জন্মায় না, তাও যদি আগাছা দেখা দেয় তাহলে হালকা করে মাটি কুপিয়ে ঝুরঝুরা করে হাতিরা দিতে হবে। আদা লাগানোর দুই মাস পর পরিমাণ মতো সরিষার খোল ইউরিয়া টি এস পিএমওপি গাছের গোড়ায় দিতে হবে।বৃষ্টি না হলে পানি দিয়ে গাছের গোড়া ভিজিয়ে দিতে হবে।

প্রতিটি বস্তায় তিন থেকে চার ঝোপ আদা রোপন করা হয় যা থেকে ৮ থেকে ১০ টি গাছ এরও বেশি গাছ বের হতে পারে। গাছগুলো বস্তার চারদিকে ছড়িয়ে যেতে পারে। আর মাটি ও ক্ষয় হয় না বস্তা ভর্তি মাটি থেকে যায়

আদা বীজ শোধন

আদার বীজ জীবাণুমুক্ত করতে ১০০ লিটার পানিতে ২০০ গ্রাম ডাইথেম এম ডব্লিউ ৪৫ মিশিয়ে ১০০ কেজি আদার বীজ ৩০ থেকে ৪০ মিনিট ভিজিয়ে রাখতে হবে। তারপর বীজগুলো তুলে শুকনো খড় বা চট দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। বীজগুলো ঢেকে রাখলে খুব তাড়াতাড়ি ভ্রুন বের হয় আর জমিতে রোপন করা যায়।

আদার রোগ বালাই

সাধারণত আদার পাতা ঝলসানো রোগ এবং রাইজোম রট রোগ দেখা যায়।পিথিয়াম এফানিডারমেটাম (Pythium Aphanidermatun) নামক ছত্রাকের আক্রমণের কারণে এই রোগ হয়। এই রোগ রাইজোমে আক্রমণ করে বলে আদা বড় হতে পারে না এবং দ্রুত গাছ মরে যায়। এই রোগের লক্ষণগুলো হলোঃ প্রথমে গাছের পাতা হলুদ হয়ে যায় কিন্তু পাতায় কোন দাগ থাকে না। পরবর্তীতে গাছ ঢলে পড়ে ও শুকিয়ে মরে যায।

ভেজা ও সেতসেতে আবহাওয়া এই রোগ হয়। বর্ষাকাল বা জলবদ্ধতা থাকলে  এই রোগের প্রকোপ বেড়ে যায়। এই রোগ বীজ ও পানির মাধ্যমে বিস্তার লাভ করে। এই রোগ থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে আক্রান্ত গাছ রাইজোম সহ তুলে ধ্বংস করতে হবে। এছাড়াও সুষম সার ব্যবহার করতে হবে। আর মনে রাখতে হবে একই জমিতে বারবার  আদা চাষ করা যাবে না।

পোকার আক্রমণ বা দমন ব্যবস্থা

আদা গাছের কান্ড ছিদ্রকারী পোকা আক্রমণ পরিলক্ষিত হয়। এই পোকা দমনের লক্ষ্যে সেভিন ডাস্ট ২% হারে ৭ থেকে ১০ দিন পর পর ২-৩ স্প্রে করতে হবে। আবার কোন কোন সময় আদার জমিতে পাতা খেকো পোকার আক্রমণ দেখা যায় বিকেল বেলায় আদার জমিতে ১% হারের ডেসিস বা ২% হারে রাইসন স্প্রে করলে পোকার উপদ্রব কম হয়। 

ফসল ঘরে তোলা

আদা রোপন থেকে শুরু করে ঘরে তোলা পর্যন্ত ২৪০-২৭০ দিন সময় লাগে। সাধারণত চৈত্র থেকে বৈশাখ( মধ্য-মার্চ থেকে মধ্য-এপ্রিল) মাসে লাগানো আদা অগ্রহায়ণ থেকে পৌষ( ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি) মাসে তোলার উপযোগী হয়। মাটির উপরে অংশ সম্পন্ন তোলা যাবে। আধা সাধারণত কোদাল দিয়ে কুপিয়ে তোলা হয়। পরিষ্কার করে সংরক্ষণ করতে হবে। 

বীজ আদা সংরক্ষণ ব্যবস্থা

 আদা সংরক্ষণের জন্য সবুজ সতেজ রোগমুক্ত মাতৃগাছ নির্বাচন করতে হবে। জমি থেকে তোলার পর গাছগুলো শুকিয়ে ১০ থেকে ১৫ দিন পর বিজ আদা সংরক্ষণ করতে হবে। সংরক্ষণের আগে তিন ভাগ ডাইথেন এম ৪৫ দিয়ে বীজ শোধন করে রাখতে হবে। এইভাবে বীজ শোধন করে রাখলে পচার রোগ থেকে রেহাই পাওয়া যায়।

  • গর্ত খনন করে সংরক্ষণ

উঁচু জমিতে ৪৫০ সেন্টিমিটার লম্বা, ৩০০ সেন্টিমিটার চওড়া এবং ১৮০সেন্টিমিটার গভীর গর্ত করে শুকিয়ে নিতে হবে। তারপর গর্তে চারপাশে খড় মিশিয়ে দিতে হবে। থলিতে বা বস্তায় ভরে একে একে সাজিয়ে মাটিতে আবরণ দিয়ে ঢেকে আদা সংরক্ষণ করা যায়.

  •  শুকনো বালু সাহায্যে সংরক্ষণ

শুকনো বালু সাহায্যে বীজ সংরক্ষণ করা যায়। এই পদ্ধতি অবলম্বন করতে হলে প্রথমে শুকনা বালির ৩-৪ সেন্টিমিটার  শুকনো বালু স্তরের ওপর বীজ আদা১০-১২ সেন্টিমিটার পুরু করে রেখে প্রথমে সবুজ পাতা ও পরে বালির আস্তরণ ২-৩ সেন্টিমিটার দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। বীজের পরিমাণ বেশি হলে এই পদ্ধতি অনুসরণ করে স্তরে স্তরে রাখা যেতে পারে।

শেষ কথাঃআদা চাষের জন্য ১০টি সেরা পদ্ধতি

আদা চাষ বাংলাদেশের কৃষির অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ  ভূমিকা পালন করে। সঠিক পরিচর্যা ও যত্নের আদা চাষ করে লাভবান হওয়া যায়। আদা চাষ করতে গেলে প্রথমে আদার ভালো বীজ চেনা জরুরি। যত ভালো বীজ হবে তত ভালো ফলন হবে।

আজকের আর্টিকেলটি পড়ে আপনাদের যদি ভালো লেগে থাকে বা কোন উপকারে আসে তাহলে কমেন্ট করে জানাবেন এবং আপনাদের বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। ধৈর্য সহকারে পুরো আর্টিকেল পড়ার জন্য আপনাকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ফকটেক ২৪ এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন

comment url