কৈশোর কালের বয়স সীমা কত
কৈশোর কালের বয়স সীমা কত অনেকেই এই চিন্তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগেন। এই চিন্তার অবসান ঘটাতে আজকের আর্টিকেলের মূল বিষয় হলো কৈশোর কালের বয়স সীমা কত এবং কৈশোর কালে শারীরিক পরিবর্তন কি তা নিয়ে আলোচনা করা হবে।
পোস্ট সূচীপত্রঃ কৈশোর কালের বয়স সীমা কত
- কৈশোর কালের বয়স সীমা কত
- কৈশোর কালের বৈশিষ্ট্য
- কৈশোর কালের সমস্যা
- কৈশোর কালের সমস্যার সমাধান
- যুবক বয়স কত থেকে কত
- শেষ কথাঃ কৈশোর কালের বয়স সীমা কত
কৈশোর কালের বয়স সীমা কত
একটি মানুষের জীবনে কৈশোর কাল হলো দ্বিতীয় পর্যায়ে। বাংলাদেশ অনুযায়ী, কৈশোর
কাল ধরা হয় ১০ থেকে ১৯ বছর বয়স পর্যন্ত। তবে বিভিন্ন দেশ ও তাদের ভৌগলিক
অবস্থানের কারণে কৈশোর কালের বয়স নির্ধারণ করা ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়।
বাংলাদেশের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুযায়ী ১০ থেকে ১৯ বছর বয়স পর্যন্ত
কৈশোর কাল ধরে। এ সময় ছেলেদের কিশোর এবং মেয়েদেরকে কিশোরী বলা হয়।
একজন মানুষের জীবনে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ সময় হচ্ছে কৈশোর কাল। কেননা কৈশোর কালে জীবনে নানা চড়াই উৎরায় পার করতে হয়। এই সময় শারীরিক পরিবর্তন, ঝুঁকিপূর্ণ কাজ, নিজে নিজে সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং আবেগপ্রবণ হওয়া মত সিস্টেম তৈরি হয়। শারীরিক পরিবর্তনের মধ্যে রয়েছে-গলার কন্ঠ চেঞ্জ হওয়া, মোচের রেখা দেখা দেয়, শরীরের বিভিন্ন অংশে চুল গজায় ইত্যাদি।
যখনই কৈশোর কালের কথা মনে আসে তখন কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের আঠারো বছর বয়স কবিতাটি মনে পড়ে। কারণ ১৮ বছর বয়স হল কৈশোর কালের মধ্যে পড়ে। কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য মাত্র ২১ বছর বয়সে পরপারে গেলেও তার কবিতাটি আমাদেরকে স্মরণ করে দেয় আঠারো বছরের সেই নির্ভয়তার কবিতাটির কথা। কবিতাটি হল-
আঠারো বছর বয়স কী দুঃসহ
স্পর্ধায় নেয় মাথা তোলবার ঝুঁকি,
আঠারো বছর বয়সেই অহরহ
বিরাট দুঃসাহসেরা দেয় যে উঁকি।
আঠারো বছর বয়সের নেই ভয়
পদাঘাতে চায় ভাঙতে পাথর বাধা,
এ বয়সে কেউ মাথা নোয়াবার নয়−
আঠারো বছর বয়স জানে না কাঁদা।
এ বয়স জানে রক্তদানের পুণ্য
বাষ্পের বেগে স্টিমারের মতো চলে,
প্রাণ দেওয়া-নেওয়া ঝুলিটা থাকে না শূন্য
সঁপে আত্মাকে শপথের কোলাহলে।
আঠারো বছর বয়স ভয়ংকর
তাজা তাজা প্রাণে অসহ্য যন্ত্রণা,
এ বয়সে প্রাণ তীব্র আর প্রখর
এ বয়সে কানে আসে কত মন্ত্রণা।
আঠারো বছর বয়স যে দুর্বার
পথে প্রান্তরে ছোটায় বহু তুফান,
দুর্যোগে হাল ঠিকমতো রাখা ভার
ক্ষত-বিক্ষত হয় সহস্র প্রাণ।
আঠারো বছর বয়সে আঘাত আসে
অবিশ্রান্ত; একে একে হয় জড়ো,
এ বয়স কালো লক্ষ দীর্ঘশ্বাসে
এ বয়স কাঁপে বেদনায় থরোথরো।
তবু আঠারোর শুনেছি জয়ধ্বনি,
এ বয়স বাঁচে দুর্যোগে আর ঝড়ে,
বিপদের মুখে এ বয়স অগ্রণী
এ বয়স তবু নতুন কিছু তো করে।
এ বয়স জেনো ভীরু, কাপুরুষ নয়
পথ চলতে এ বয়স যায় না থেমে,
এ বয়সে তাই নেই কোনো সংশয়−
এ দেশের বুকে আঠারো আসুক নেমে।।
কৈশোর কালে সাধারণত বয়সন্ধিকাল হয়ে থাকে। ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের আগে
বয়সন্ধিকাল ঘটে। মেয়েদের সাধারণত আট বছর থেকে বয়সন্ধিকাল শুরু হয়। শারীরিক
গঠন এবং হরমোনের কারণে মেয়েদের আগে বয়সন্ধিকাল ঘাটে। তার থেকে বড় কারণ হচ্ছে
বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থানের জন্য বাংলাদেশের মেয়েদের তাড়াতাড়ি বয়সন্ধিকাল
হয়।
কৈশোর কালের বৈশিষ্ট্য
কৈশোর কাল হলো শৈশব থেকে প্রাপ্তবয়স্ক জীবনের মধ্যবর্তী পরিবর্তনের সময়। সাধারণত এই সময়টি ১১ থেকে ১৯ বছর বয়সের মধ্যে পড়ে। এ সময়ে শারীরিক, মানসিক, সামাজিক ও আবেগীয় নানা পরিবর্তন ঘটে। তাহলে চলুন কৈশোর কালের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোচনা করি-
শারীরিক পরিবর্তন
- দেহ দ্রুত বাড়তে শুরু করে, ওজন বৃদ্ধি পায় এবং উচ্চতাও বৃদ্ধি পায়
- যৌন পরিপক্ষ হয়, প্রজনন ক্ষমতা অর্জিত হয়
- মেয়েদের স্তন বৃদ্ধি পায় এবং ছেলেদের দাড়ি, গোঁফ গজায়।
- কণ্ঠস্বর পরিবর্তন হয়, মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের কণ্ঠস্বর বেশি চেঞ্জ হয়
- মেয়েদের ঋতুস্রাব শুরু হয়
- মেয়েদের এবং ছেলেদের উভয়ের কাধ চড়া হয়
মানসিক পরিবর্তন
- চিন্তা এবং বিচার করার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়
- কোন কিছু জানার প্রতি কৌতুহল এবং আত্ম সচেতনতা বোধ সজাগ হয়
- নিজের প্রতি আত্মসম্মান ও স্বাধীনতা বোধ জন্মায়
- কিশোর বয়সে আবেগ নিয়ন্ত্রণের সমস্যা বেশি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ে
- এই বয়সে প্রেমে পড়ার মতো প্রবণতা দেখা দেয়
আবেগীয় পরিবর্তন
- মেজাজ উঠানামা করে
- ভালোবাসা, বন্ধুত্ব ও সম্পর্কের প্রতি আকর্ষণ হতে পারে
- আত্মপরিচয় বা আমি কে এরকম প্রশ্ন মনের ভিতর রাখতে পারে
- ভালো লাগা সৃষ্টি হয়
সামাজিক পরিবর্তন
- পরিবার থেকে কিছুটা দূরত্ব তৈরি হয়ে সমবয়সীদের সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হয়।
- সমাজে নিজের অবস্থান বোঝার চেষ্টা করে।
- দায়িত্ববোধ ও নেতৃত্বের গুণাবলি গড়ে উঠতে শুরু করে।
কৈশোর কালের সমস্যা
আমাদের সমাজের সাধারণত কৈশোর কালে যেসব সমস্যা দেখা দেয় সেগুলো হলো স্কুল
পালানো, মেয়েদের প্রতি অশোভন ব্যবহার, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, খুন, মাদক
সেবন ইত্যাদি। এছাড়াও সামাজিক ভাবে অগ্রহণযোগ্য কাজগুলো হলো-গাড়িতে ঢিল মারা,
কোথাও আগুন লাগানো, পশু পাখিকে আঘাত করে মজা পাওয়া, কারো জমির জোরজবস্তি দখল করা
ইত্যাদি।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে কৈশোর কালের সমস্যা হয় সাধারণত ডিভোর্সি মা-বাবা, অর্থনৈতিক সমস্যা, বেকার হীনতা, দারিদ্রতা, ঘনবসতি, লেখাপড়া ও খেলাধুলার অসুবিধা, বখাটে ছেলের সাথে মেলামেশা, পরিবারে অশান্তিকর পরিবেশ, বাবা মা ও ছেলে মেয়েদের মধ্যে কলহ, ছেলে মেয়ের প্রতি অবহেলা, ছেলে মেয়েকে কঠোর শাসনে রাখা ইত্যাদি।
কৈশোর কালে আরেকটা সমস্যা হল প্রেমের প্রত্যাখ্যান। বর্তমান যুগের
ছেলেমেয়েরা প্রেমকে সচরাচর ভেবে প্রেম করে। আবেগে আপ্লুত হয়ে প্রেমে
পড়ে ভালো মন্দ কিছু না দেখে। কিন্তু পরক্ষণে দেখা যায় সেই প্রেমে ছ্যাকা খেয়ে
ব্যাকা হয়ে জীবনকে নষ্ট করে দেয় নেশায় ডুবে। তখন বাবা মার কথা না শুনে
নেশার জগতে ডুবে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কাজ করে থাকে। যা বর্তমান যুগের
একটি বিরাট সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কৈশোর কালের সমস্যার সমাধান
যে সকল কিশোর নানা ধরনের অপরাধের স্বীকার তাদের জন্য প্রতিরোধক মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা আবশ্যক। তবে ছেলেমেয়েরা ছোট অপরাধ করলে পিতা-মাতার উচিত তাদেরকে বোঝানো। সেই সাথে চেষ্টা করতে হবে ছেলেমেয়েদের আচরণ পরিবর্তন করার জন্য। শিশু যদি বড় অপরাধ করে বা কোনভাবে তাকে বোঝানো যাচ্ছে না। তাহলে শিশু সংশোধনী সংস্থা রয়েছে, যেখানে শিশুদেরকে সংশোধনের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের কাজ শেখানো হয়ে থাকে।
কাজগুলো হলো-সেলাইয়ের কাজ করা, অটোমোবাইল ঠিক করা, পর্যাপ্ত খেলাধুলার সময় দেওয়া, বিভিন্ন ধরনের কাঠের কাজ করা ইত্যাদি। একটা কথা মনে রাখতে হবে শিশু কোন সময় অপরাধী হয়ে জন্মায় না। পারপার্শ্বিক অবস্থায় অপরাধী করে তোলে। তাই প্রতিরোধক মূলক ব্যবস্থায় কিশোরদের অপরাধের প্রবণতা থেকে রক্ষা করে।
সব থেকে বড় কথা হলো ছেলে মেয়েদের সাথে পিতা-মাতার আচরণ হবে বন্ধুত্ব সুলভ। কৈশোর কালীন সময়ে সে কিশোরেরা অনেক কঠিন বাস্তবের মুখোমুখি হয়। এই সময় পিতা-মাতার সাথে ভালো আচরণ বা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকলে মন খুলে কথা বলতে পারে। তখন দেখা যায় অপরাধ করার প্রবণতা অনেকটা কমে আসে। তাই আমার কথায় সন্তানদের বড় হওয়ার পাশাপাশি সন্তানদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলুন। যাতে আপনার সন্তান সমস্যার মুখোমুখি হলে নির্দ্বিধায় আপনার সাথে শেয়ার করতে পারে।যুবক বয়স কত থেকে কত
একজন মানুষের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বয়স হল যুবক বয়স বা যৌবন বয়স। কৈশোরকাল এবং
বৃদ্ধকালের মাঝামাঝি বয়স হলো যৌবনকাল। যৌবনকাল সাধারণত 18 থেকে 35 বছর ধরা হয়।
কিন্তু জাতিসংঘ এটিকে ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়স পর্যন্ত ধরা হয়েছে। যৌবন বয়সে
জীবনের চরম পর্যায় পৌঁছে যায়।
যুবক বয়সে মানুষ সফলতার সন্ধানী হয়। যুবক বয়সেই জীবনে
সুখ-দুঃখ,হাসি-কান্না,জীবনের লক্ষ্য পূরণ করে থাকে। ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে বলা
হয়েছে যৌবনকালের ইবাদত সব থেকে শ্রেষ্ঠ ইবাদত। তাই বলা যায় যৌবনকালে যা অর্জন
করবে, তা সারা জীবন ভোগ করবে।
শেষ কথাঃ কৈশোর কালের বয়স সীমা কত
প্রিয় পাঠক, আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে কৈশোর কালের বয়স সীমা কত এবং কৈশোর
কালের শারীরিক পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। কৈশোর কালের বৈশিষ্ট্যের
কথা তুলে ধরা হয়েছে এবং কৈশোর কালের সমস্যার সমাধান আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি
এ আলোচনা থেকে আপনারা উপকৃত হবেন।
আমার কথা হল এই যে, একজন শিশু বা একজন কিশোর কখনো অপরাধ নিয়ে জন্মগ্রহণ করে না। চারপাশের আচার আচরণ এবং ব্যবহারবিধি দেখেই অপরাধমূলক কাজে পা বাড়ায়। একজন কিশোরের সাথে তার পরিবারের সদস্যদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ থাকলে এসব অপরাধমূলক কাজ ঠেকানো যেতে পারে। তাই, শিশু-কিশোরদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করুন।



ফকটেক ২৪ এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন
comment url