বাচ্চাদের কথা শেখানোর উপায় ৬টি কার্যকরী টিপস


বাচ্চাদের কথা শেখানোর উপায় খুঁজছেন? আজকের আর্টিকেল পড়ে সেই অনুযায়ী বাচ্চার মেলামেশা করলে বাচ্চারা কথা বলার চেষ্টা করবে। আজকের আর্টিকেলে থাকছে বাচ্চাদের কথা শেখানোর উপায় এবং বাচ্চারা কথা না বলার কারণ।

বাচ্চাদের-কথা-শেখানোর-উপায়-৬টি-কার্যকরী-টিপস

বাচ্চাদের জীবনের প্রথম পাঠশালা হলো বাবা-মা ও তার পরিবার। বাচ্চা কথা বলা শেখাতে হলে সময় বাচ্চার সাথে কথা বলতে হবে। তাহলে চলুন আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে জেনে নেই কিভাবে বাচ্চাদের কথা শেখানো যায়।

পোস্ট সূচিপত্রঃবাচ্চাদের কথা শেখানোর উপায়

বাচ্চাদের কথা শেখানোর উপায়

বাচ্চাদের কথা শেখাতে হলে সব সময় বাচ্চার সাথে কথা বলতে হবে। জন্মের পর থেকে ছয় মাস পর্যন্ত বাচ্চারা পরিবারের কাছে থাকে। ৬ মাস পার হয়ে পাড়া বা মহল্লার মানুষের সাথে আস্তে আস্তে পরিচিতি হয়। তাই বলা হয় বাচ্চাদের প্রথম পাঠশালা হলো তার পরিবার। বাচ্চারা হলো অনুকরণ প্রিয়। আপনি যদি বাচ্চাকে কোলে নিয়ে সবসময় তার সাথে কোন না কোন কথা বলতে থাকেন এক সময় দেখবেন আপনার তালে তাল মিলাচ্ছে বা মুখ নড়াচ্ছে আপনার বাচ্চা। 

বাচ্চাদের প্রথম বুলি পরিবারের সবার কাছে প্রিয়। যখন তারা আধো আধো কথা বলতে শিখে তখন তাদের কথার সাথে আপনিও যোগ দিন। আপনিও তার সাথে কথা বলতে থাকুন। অর্থবহ ছোট ছোট কথা দিয়ে শুরু করেন। যেমন শিশুর সামনে বল নিয়ে ধরুন, আর বলুন বল বল দেখবেন বাচ্চারাও বল, বল বলবে। রান্না করার সময় অথবা ঘর গোছানোর সময় বাচ্চার সামনে কাজ করুন এবং কথা বলুন দেখবেন বাচ্চা মনোযোগ সহকারে আপনার কথা শুনছে। এইভাবেই আস্তে আস্তে আপনার বাচ্চা কথা শিখে যাবে। 

বাচ্চাদের কথা না বলার কারণ

বাচ্চা কথা না বলার কারণ অনেকগুলো হতে পারে। অনেকেই মনে করে বাচ্চা দেরিতে কথা বলা বা কথা না বলা হলো অটিজম, তা কিন্তু নয়। প্রথম ছয় মাস বাচ্চা মা-বাবাকে চিনে। মায়ের কণ্ঠস্বর উপলব্ধি করে। বাচ্চার প্রথম বাচনভঙ্গি হলো কান্না করে বোঝানো। বাচ্চার খিদে পেলে বা দুধ খাওয়ার সময় মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে এবং মুচকি হাসি দিয়ে সবকিছু বুঝায়। ছয় মাস পার হয়ে গেলে তারা মুখে অল্প আধো আধো ভাষায় নিজের ভাব বিনিময় করে। আবার ইশারা দিয়ে বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে কথা বলতে শিখায়।

আগেই বলেছি বাচ্চারা অনুকরণ করে। আপনি যদি তার সাথে সবসময় কথা বলেন সেও আপনার কথা শুনে চেষ্টা করে উত্তর দেওয়ার। কিন্তু আপনি যদি বাচ্চার সাথে কথা না বলেন তাহলে বাচ্চার কথা বলতে বার শিখতে অনেক সময় লাগে। তাছাড়া দেখা যায় অনেক বাচ্চারা কঠিন শব্দগুলো মুখে উচ্চারণ করতে পারে না। আবার উচ্চারণের চেষ্টা করলেও ভেঙে ভেঙে বলে। অনেক শিশুর বাসনভঙ্গীর বিকাশ ধীরগতি।

আরও পড়ুনঃ চুলের যত্নে কালোকেশি পাতার ব্যবহার

সেটির কারণ হতে পারে দাঁত, ঠোঁট, চোয়াল এবং জিহবার যুগলবন্দী সঠিকভাবে বিকশিত না হওয়া। তাছাড়া অনেক শিশু কথা বলছে, উচ্চারণ ঠিকঠাক করছে কিন্তু সেটি সমন্বয় হচ্ছে না সঠিকভাবে ভাব প্রকাশ করতে পারছে না। তার চারপাশের মানুষ কি বলছে, নতুন শব্দ কি ব্যবহার করছে সেটা বুঝতে পারছি না।

বাচ্চাদের কথা বলার বয়স

শিশুদের কথা বলার বয়স সাধারণত তিন মাস থেকে শুরু হয়। শিশুর ভাষিক বিকাশ ঘটে প্রাক বাচনভঙ্গির মাধ্যমে। প্রাক-বাচনভঙ্গি শুরু হয় তিন মাস বয়স থেকে। প্রথম তিন থেকে চার মাসে মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে এবং মায়ের ভাষা উপলব্ধি করে। তিন থেকে চার মাস বয়সে আপনি কথা বললে দেখবেন বাচ্চাও মুখ নড়াচ্ছে কথা বলার জন্য। ৫ থেকে ৮ মাসে শিশু অর্থবিহীন কথা বলবে যেমন দাদাদা, মামামা।

বাচ্চাদের-কথা-শেখানোর-উপায়-৬টি-কার্যকরী-টিপস

১০ থেকে ১৩ মাসের শিশুরা একটি করে কথা বলা শুরু করবে। এসব একটি শব্দ দিয়ে কিছু না কিছু বোঝানোর চেষ্টা করবে যেমন শিশুর পিপাসা পেলে বলবে- মাম, মাম। ১৮ মাসে গিয়ে শিশু দুই শব্দের কথা বলা শুরু করবে- যেমন ভাত খাব, দুদু দাও। দুই থেকে আড়াই বছরের বাচ্চাদের একের অধিক শব্দ দিয়ে কথা বলতে শুরু করবে। কিন্তু আড়াই বছর থেকে তিন বছর এর শিশুরা স্পষ্ট ভাবে অর্থবহ একাধিক শব্দ ব্যবহার করে কথা বলতে পারবে। কিছু কম বেশি হতে পারে কিন্তু কথা বলতে পারবে। তারপর থেকে আস্তে আস্তে বড়দের মতো করে কথা শুরু করবে।

শিশুর দেরিতে কথা বলার কারণ ও সমাধান

শিশু দেরিতে কথা বলার কারণ হতে পারে নিজের পরিবারের সদস্যরা। কারণ শিশুদের যত বেশি সময় দেওয়া যাবে শিশুরা তত বেশি কথা বলা, হাঁটাচলা এবং বাচনভঙ্গি বুঝবে। কিন্তু বর্তমান যুগে পরিবারের সদস্যরা কাজে ব্যস্ত থাকে বেশি। আবার ফ্রি টাইমে মোবাইল স্কল করতে থাকে। এইজন্য শিশুদের বাচন ভঙ্গির বিকাশ ধীরগতিতে হয়। 

বর্তমান শিশুদের দেরিতে কথা বলার প্রধান কারণ হচ্ছে একক পরিবার। একক পরিবারে মা এবং বাবা থাকে। তারা সব সময় কাজে ব্যস্ত থাকে। দেখা যায় শিশুর দেখাশোনা করার জন্য কাজের বুয়া রাখে কিন্তু শিশুর কথা শেখার জন্য যতটুক সময় প্রয়োজন হয় তা পায় না। আর এসব সমস্যার জন্য শিশুর বিকাশ ঠিকমতো হয় না। আবার দেখা যায় দুই থেকে আড়াই বছর বয়স হলেই শিশুর হাতে স্মার্টফোন ধরিয়ে দেয়।

আরও পড়ুনঃ নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা 

বাচ্চা খাবার কার্টুন দেখে, ঘুমায় কার্টুন দেখে এবং দিনের বেশিরভাগ সময় যায় মোবাইলে। সহপাঠীদের সাথে সহজে মিশতে চায় না। কথা বলতে চায় না, খেলতে চায় না। কোন শিশুদের তুলনায়  অনেক পিছিয়ে থাকার থাকার সম্ভাবনা বেশি থাকে। শিশু দেরিতে কথা বলার সমাধান আছে কিন্তু সময় সাপেক্ষ। তাহলে চলুন শিশু দেরিতে কথা বলার সমাধান জেনে নিই-

দেরিতে কথা বলার প্রথম চিকিৎসা হলো স্পিচ থেরাপি। এই স্পিচ থেরাপির মাধ্যমে বাচ্চার সাথে সহজভাবে মিশতে হবে। গান, কবিতা, গল্পের বই পড়ে শুনাতে হবে। দেরিতে কথা বলা, কানে কম শোনা, কারণে কথা বলতে সমস্যা ইত্যাদি নানা বিষয়ে যারা স্বাভাবিক কথা বলতে পারে না, তাদের স্বাভাবিক ছন্দে প্রাণ খুলে কথা বলার সুযোগ এনে দিয়েছে। স্পিচ থেরাপি মাধ্যমে শিশুদের সাথে কথা বলা তাদের সময় দেওয়া পছন্দের কাজগুলো করা খেলার ছলে শব্দ শেখানো

প্রতিটি শিশুর কথা বলার ক্ষেত্রে বাবা মায়ের গুরুত্ব অপরিসীম। আপনার শিশুকে পর্যাপ্ত পরিমাণ সময় দিন। তার সাথে খেলা করুন। খেলার ছলে নানা ধরনের শব্দ শেখান এবং বিভিন্ন ধরনের জিনিসের সাথে পরিচয় করিয়ে দিন। একটা কথা মনে রাখবেন মোবাইল দিবেন না শিশুর হাতে। 

বাচ্চা বোবা হওয়ার লক্ষণ

বাচ্চা বোবা হওয়া হলো অটিজমের শিকার। গর্ভ অবস্থা থেকে তিন-চার বছর পর্যন্ত বাচ্চার স্নায়বিক বৃদ্ধি হয়। অটিজমের সমস্যাগুলো হয় জেনেটিক কারন যন্ত্র জনিত ধরনের মাতৃত্বকালীন জমজ বা ভাই-বোনের অভিন্ন অটিজম হওয়ার সম্ভাবনা বেশি অন্যান্য কারণগুলি খাদ্য ভ্যাকসিন পরিপাক তন্ত্রের পরিবর্তন এবং ভিটামিন এবং খনিজ শোজনের অক্ষমতার সাথে সম্পর্কিত।

বেশিভাগ পিতা-মাতা অনুভব করেন তাদের সন্তান সাথে কিছু ভুল হয়েছে যখন সন্তানের বয়স ১৮ মাস হয়। এক দুবছর বাচ্চা স্বাভাবিক বিকাশ ঠিক থাকে কিন্তু তারপর আস্তে আস্তে সামাজিকতা এবং ভাষার দক্ষতা হাহ হারায়। যে শিশু বোবা হবে সে শিশু কানেও শুনবে না। বাচ্চা যদি একা না হাসে, কথা না বলে তাহলে বোঝা যাবে বাচ্চাটি বোবা হবে।

শেষ কথাঃবাচ্চাদের কথা শেখানোর উপায়

প্রিয় পাঠক, সন্তান সবার কাছে প্রিয়। সন্তানকে সময় দিন, খেলা করুন, এবং বিভিন্ন জিনিসের সাথে পরিচয় করিয়ে দিন। জন্মের পর থেকেই এই কাজগুলো করবেন। তাহলে বাচ্চার মানসিক, শারীরিক কথা বলার বচনভঙ্গি, সামাজিকতা শিখতে পারবে। একটি ভুলে জন্য আপনি আপনার সন্তানের ভবিষ্যৎ নষ্ট হতে পারে।

আজকে পোষ্টের মাধ্যমে বাচ্চাদের কথা শেখানোর উপায় আলোচনা করা হয়েছে। পোস্টটিতে অনেক সহজ করে বোঝানো হয়েছে। আশা করি এতে আপনার উপকৃত হবেন। এবং আপনার বাচ্চাদের সময় দিয়ে সুন্দর এবং উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ফকটেক ২৪ এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন

comment url