বেগুন চাষের উপযুক্ত সময় এবং বেগুন চাষের মাটির বৈশিষ্ট্য
বেগুন চাষের উপযুক্ত সময় এবং বেগুন চাষের মাটির বৈশিষ্ট্য না জানার কারণে অনেকেই বেগুন চাষ করে লাভবান হতে পারেন না। তাই আজকে আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনাদের সামনে বেগুন চাষের উপযুক্ত সময় এবং বেগুন চাষের মাঠের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরার চেষ্টা করব।
বেগুন শীতকালীন ফসল হলেও এটি এখন সারা বছর চাষ করা যায়। বেগুন অতি পরিচিত একটি সবজি। এই সবজি আমরা তরকারি রান্না করে খায় এবং চপ বানিয়েও খাওয়া যায়। এই ফসল চাষ করতে হলে কতগুলো নিয়ম কারণ মানতে হয়। তাহলে চলুন মূল আলোচনায় যাওয়া যাক-পোস্ট সূচীপত্রঃ বেগুন চাষের উপযুক্ত সময় এবং বেগুন চাষের মাটির বৈশিষ্ট্য
- বেগুন চাষের উপযুক্ত সময়
- বেগুন চাষের মাটির বৈশিষ্ট্য
- শীতকালীন এবং বারোমাসি বেগুনের জাত
- বেগুন চাষের জন্য জলবায়ু
- বেগুন চাষের জন্য চারা তৈরি
- বেগুন চাষের জন্য জমি তৈরি
- বেগুন চাষের জন্য চারা রোপন
- বেগুন গাছের রোগবালাই
- বেগুন গাছে সার প্রয়োগ
- বেগুন গাছে সার প্রয়োগের সময় সর্তকতা
- শেষ কথাঃ বেগুন চাষের উপযুক্ত সময় এবং বেগুন চাষের মাটির বৈশিষ্ট্য
বেগুন চাষের উপযুক্ত সময়
বাংলাদেশের বেগুনের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বিশেষ করে রমজান মাসে বেগুনের
চাহিদা ব্যাপক হারে বেড়ে যায়। কারণ রোজার মাসে বেগুনের চপ বানানো হয়
বেশি। তাই সেই সময় বেগুনের দাম ধরা বাধার বাহিরে থাকে সে সময় সাধারণ
মানুষের বেগুন ক্রয় করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। বেগুনের নানা রেসিপি
করা থাকে সবাই। যেমন বেগুন ভর্তা, বেগুন ভাজি এবং বেগুনের তরকারি।
বেগুন বছরের যে কোন সময় চাষ করা যায়। তবে রবি মৌসুমে অর্থাৎ শীতকালে বেগুন
চাষ করলে ফলন ভালো পাওয়া যায়। শীতকালে বেগুন তোলার জন্য সাধারণত আগস্ট-অক্টোবর
মাসে বেগুনের বীজ বপন করা হয়। আর খরিপ মৌসুমে অর্থাৎ বর্ষাকালে বেগুন
লাগানোর জন্য জানুয়ারি-মে মাস পর্যন্ত বীজ বপন করা উপযুক্ত সময়। তবে রবি
মৌসুমে বেগুন চাষ করলে খরিপ মৌসুম থেকে বেশি ফলন পাওয়া যায়।
বেগুন চাষের মাটির বৈশিষ্ট্য
বেগুন চাষের জন্য মাটির বৈশিষ্ট্য এবং গুনাগুন সবচেয়ে গুরুত্বের একটি বিষয়। মাটির উপর নির্ভর করেই ফলন কমবেশি হয়ে থাকে। তাই যে মাটিতে ফলন বেশি হবে সেই মাটিতে বেগুন চাষ করা উচিত। তাহলে চলুন বেগুন চাষের মাটির বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করি-বেগুন সাধারণত এটেল দোআঁশ এবং বেলে দোআঁশ মাটিতে ভালো জন্মে।পানি নিষ্কাশিত উঁচু জমিতে বেগুন চাষ ভালো হয়। বাণিজ্যিকভাবে করলা চাষ করা যেতে পারে এবং বাড়িতে টবে ছাদবাগান হিসেবে করলা চাষ করতে।
আরো পড়ুনঃকরলা চাষের উপযুক্ত সময় এবং করলা চাষের মাটির বৈশিষ্ট্য
বেগুন চাষ প্রায় সব মাটিতে করা যায়। হালকা বেলে থেকে ভারী এটেল মাটিতে অর্থাৎ
প্রায় সব মাটিতে বেগুন চাষ করা যায়। কিন্তু এ ধরনের মাটিতে বেগুন চাষ করলে
প্রচুর পরিমাণে জৈব সারসহ অন্যান্য সার ঘন ঘন প্রয়োগ করতে হয়। তবে বেগুনের ফলন
ভালো পাওয়া যায়।
শীতকালীন এবং বারোমাসি বেগুনের জাত
ভাল ফলন পেতে হলে উপযুক্ত বেগুনের জাত নির্বাচন করা একান্ত প্রয়োজন। বাংলাদেশে বেগুনের বহু জাত রয়েছে। এক জাত থেকে অন্যজাতে গাছের প্রকৃতি, ফলের রং, আকার, আকৃতি প্রভৃতি বিষয়ে বেশ পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। বাংলাদেশে প্রধানতঃ লম্বা বেগুন এবং গোলাকার বেগুন এই দুই ধরণের বেগুনের চাষ বেশী হয়ে থাকে। সব জাতকে মৌসুম ভিত্তিক দুই ভাবে ভাগ করা যেতে পারে, যেমন-শীতকালীন বেগুন ও বারমাসী বেগুন। শীতকালীন জাতের বেগুন রবি মৌসুমে চাষ করা হয় কারণ, এই জাতের বেগুন কেবলমাত্র রবি মৌসুমেই ফল দিতে পারে। আর বারমাসী বেগুন বছরের যে কোন সময় চাষ করা যেতে পারে।
ইসলামপুরীঃএটি শীতকালীন জাত।গাছের উচ্চতা মাঝারি ধরনের ও শাখা প্রশাখাযুক্ত। পাতার রং বেগুনী সবুজ। ফল গোলাকার, কচি অবস্থায় গাঢ় বেগুনী, পরিপক্ক অবস্থায় সবুজাভ বেগুনী। তবে কোন কোন সময় ত্বকে সবুজ বর্ণের ছোপ থাকতে পারে। ফলের শাঁস মোলায়েম ও সুস্বাদু, বীজের সংখ্যা কম।গাছ প্রতি গড় ফল ধরার সংখ্যা ১৩টি।
খটখটিয়াঃশীতকালে চাষ উপযোগী জাত। গাছ উচ্চতায় ও বিস্তৃতিতে মাঝারি, পাতা মাঝারী চওড়া। ফল দন্ডাকার ও কালচে বেগুনী। ফল লম্বায় ১৬-২০ সেমি. ও বেড়ে ৩.৫০-৫.৫০ সেমি.। প্রতিটি ফলের ওজন ১০০-১২৫ গ্রাম।
লাফফাঃশীতকালীন জাত ফলের রং বেগুনী এবং গোলাকার। ফলের উপরিভাগ সামান্য খাদালো। ময়মনসিংহের গফরগাঁও এলাকার একটি জনপ্রিয় জাত।
ঈশ্বরদি ১ঃএটি প্রধানত শীতকালীন জাত। তবে অন্যান্য সময়ও চাষ করলে কিছু ফলন পাওয়া যায়। গাছ কাটাময়, পাতা খাটো ও চওড়া ধরনের। ফল বড়, গোলাকার এবং রং সবুজ ও তার উপর হালকা ডোরা। ফলে বীজ খুব ও খুব সুস্বাদু নয়। এ জাতে পোকা মাকড়ের উপদ্রব খুব কম।
বারি বেগুন ১ঃবাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনষ্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত একটি উন্নত জাত। শীতকাল এ বেগুন চাষের উপযুক্ত সময়। গাছের পাতা ও কাণ্ড হালকা বেগুনী এবং পাতার শিরাগুলো গাঢ় বেগুনী হয়। গাছ খাটো আকৃতির ও ছড়ানো হয়ে থাকে। প্রতি গুচেছ ৫-৬টি ফল ধরে। ফলের রং বেগুনি। ফলের ত্বক খুব পাতলা, শাঁস মোলায়েম এবং খেতে সুস্বাদু। এ জাতটি ‘ঢলে পড়া’ নামক রোগ প্রতিরোধ করতে পারে। গাছ প্রতি গড়ে ১৯৫টি ফল ধরে।
তাল বেগুন বা তল্লা বেগুনঃ গাছ উচ্চ, বি্স্তৃতি কম, শাখা ও পাতার সংখ্যা কম। পাতা বড় ও চওড়া। ফল গোলাকার ও চ্যাপ্টাকৃতি। ফলের বেড় দৈর্ঘ্য অপেক্ষা বেশী। ফলের শাঁস মোলায়েম ও সুস্বাদু, বীজের সংখ্যা মধ্যম। প্রতিটি ফলের ওজন ২০০-৪০০ গ্রাম।
নয়ন কাজল প্রধানতঃ শীতকালীন জাত। গাছের উচ্চতা মাঝারী ধরনের ও শাখা প্রশাখা যুক্ত। ফল বেলুনাকৃতি, লম্বা ২০ সেমি. পর্যন্ত হতে পারে, ফলের রং হালকা সবুজ, বোঁটার কাছে হালকা বেগুনী। চোখের কাজলের মত আচড় আছে। সম্ভবতঃ এ কারণে জাতটির নাম নয়ন কাজল। একটি অধিক ফলনশীল জাত, ফলে বীজের পরিমাণ কম, শাঁস মোলায়েম এবং খেতে সুস্বাদু।
কেজি বেগুনঃশীতকালীন জাত। গাছের উচ্চতা মাঝারি, পাতা চওড়া, ঢেউ খেলানো ফল বোঁটার দিক থেকে ক্রমান্বয়ে মোটা, অনেকটা লাউয়ের মত দেখতে হয়। ফলের রং হালকা সবুজ এবং গায়ে লম্বালম্বি হালকা আচড় আছে। বীজ অত্যন্ত কম, শাঁসালো, নরম এবং অত্যন্ত সুস্বাদু। বেগুন ভাজা, বেগুনী, চপ ইত্যাদি তৈরিতে এর জুড়ি নেই। উপযুক্ত পরিচর্যা পেলে প্রতিটি ফলের ওজন গড়ে ১ কেজি পর্যন্ত পাওয়া যায়। এ কারণে এ জাতটি এখন খুব জনপ্রিয় নয়।
শিংনাথঃএকটি বারমাসী জাত। গাছ বেশ উঁচু, পাশেও অধিক, শাখা প্রশাখার সংখ্যা প্রচুর। পাতা সরু ধরনের। এর ফল সরু, লম্বায় প্রায় ৩০ সেমি. ও বেগুনী রংয়ের। বেগুনের মধ্যে বীজ মাঝারি সংখ্যক, খেতে সুস্বাদু। এই জাতের বেগুনের মধ্যে কতকগুলি উপজাত আছে, যেগুলি ফলের আকার, আকৃতি, বর্ণের দিক থেকে পরষ্পর থেকে ভিন্ন।
ঝুমকোঃগাছ খাটো, খুবই ফলনশীল জাত। ফল খাটো, সরু ও ৮-১০ সেমি. লম্বা। বেগুন গাছের গুচ্ছভাবে উৎপন্ন হয়। ফলের ত্বক খুব পাতলা ও শাঁস মোলায়েম। ডগা ও ফলের মাজরা পোকার আক্রমণ কম হয়।
ডিম বেগুনঃএকটি উচ্চ ফলনশীল বারমাসী জাত। এ জাতে পোকার উপদ্রব খুব কম হয়। ফল ধবধবে সাদা, আকৃতিতে প্রায় ডিমের মত।
মুক্তকেশীঃএটি বারমাসী জাত, আগষ্ট (মধ্য শ্রাবণ-মধ্য ভাদ্র) মাস থেকে বেগুন বাজারে বিক্রয়ের জন্য উঠানো যায়। গাছ মাঝারী আকৃতির, ফল উপবৃত্তাকার ও চকচকে বেগুনী।
শুকতারাঃবাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনষ্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত একটি হাইব্রিড জাত। সুফলা ও উত্তরা জাতের মধ্যে সংকরায়নের মাধ্যমে উদ্ভাবন করা হয়েছে। শ্রাবণ-ভাদ্র মাস চারা রোপণের উপযুক্ত সময়। ফল বেগুনী, গড়ে ১৯ সেমি. লম্বা ও বেড় ৪ সেমি.। উচ্চফলনশীল, প্রতিটি ফলের ওজন গড়ে ৬০ গ্রাম। প্রতি হেক্টরে গড়ে ৮০ টন ফলন পাওয়া যায়। সংকর জাতের কারণে এ জাতটি ঢলেপড়া নামক রোগ প্রতিরোধ করতে পারে। কৃষকদের জমিতে উৎপন্ন বীজ থেকে বীজ সংগ্রহ করে পরবর্তী বছর বেগুন চাষ করা যাবে না। প্রতি বছরই বীজ নতুন করে সংগ্রহ করতে হবে।
বারি বেগুন ২ঃবাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনষ্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত হাইব্রিড জাত। ইসলামপুরী ও উত্তরা জাতের মধ্যে সংকরায়নের মাধ্যমে উদ্ভাবিত, শ্রাবণ-ভাদ্র মাস চারা রোপণের উপযুক্ত সময়। এ জাতটি ব্যাকটেরিয়াজনিত ঢলে পড়া রোগ প্রতিরোধ করতে পারে। উৎপাদনের জন্য প্রতি বছর নতুন করে বীজ সংগ্রহ করতে হবে।
কাজলা (বারি বেগুন ৪)ঃএটি একটি হাইব্রিড জাত। এ জাতের ফলের আকার লম্বা, রং কালচে বেগুনি, চকচকে। গাছ মাঝারি আকৃতির ছড়ানো। গাছপ্রতি ফলের সংখ্যা ৭০-৮০টি, প্রতিটি ফলের ওজন ৫৫-৬০ গ্রাম। জাতটি ঢলে পড়া রোগ সহনশীল।
নয়নতারা (বারি বেগুন ৫)ঃএ জাতের ফলের আকার গোল, রং লালচে বেগুনি। গাছ খাড়া আকৃতির। গাছপ্রতি ফলের সংখ্যা ২৫-৩০টি, প্রতিটি ফলের ওজন ১২০-১৩০ গ্রাম। আগাম ফলন দেয়। জাতটি ঢলে পড়া রোগ ও বেগুনের ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকার আক্রমণ কিছুটা প্রতিরোধ করতে পারে।
বিজয়ঃএকটি হাইব্রিড জাত, সারা বৎসর চাষ করা যায়। গাছ ডালপালা বিশিষ্ট, সব শাখা প্রশাখায় বেগুন ধরে। ফল উপ গোলাকার, বেলুন আকৃতি, আকর্ষণীয় কালচে বেগুনী রং, বোঁটা সবুজ। ফলের ছাল পাতলা, খেতে সুস্বাদু। প্রচুর ফলন পাওয়া যায়। প্রতিটি বেগুনের গড় ওজন ১৭০ গ্রাম। চারা রোপণের ৪৫-৫০ দিন পর থেকে বেগুন সংগ্রহ করা যায়। অনেক দিন যাবত ফলতে থাকে। চাষের জন্য প্রতি বছর নতুন বীজ সংগ্রহ করতে হয়।
চমক এফ১ঃএটি একটি হাইব্রিড জাত। আষাঢ় থেকে পৌষ মাসের মধ্যে চারা রোপণ করতে হয়। চারা রোপণের ৫৫-৬০ দিন পর ফল ধরে। গাছ ও পাতা বড়, অনেক ডালপালা, বেগুন লম্বায় প্রায় ২৫ সেন্টিমিটার।
কাজল এফ১ঃ বেগুন গোল, রং কালো, প্রতিটি বেগুনের ওজন ৩০০-৪০০ গ্রাম, গাছ বড় ও ঝোপালো।
আরো পড়ুনঃআদা চাষের জন্য ১০টি সেরা পদ্ধতি
বেগুন চাষের জন্য জলবায়ু
বেগুন চাষের জন্য উষ্ণ এবং আদ্র আবহাওয়ার সবচেয়ে উপযোগী। বেগুনের জন্য
১৫-২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা সর্বোত্তম। দিনের বেলায় ২৬-৩২ ডিগ্রী
সেলসিয়াস এবং রাতের বেলায় ১৫ থেকে ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা প্রয়োজন।
কারণ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ফুল এবং ফলের উৎপাদন ব্যাহত করে এবং পোকামাকড় বেশি হয়।
বাংলাদেশের বেশিভাগ অঞ্চলে সারা বছর বেগুন চাষ করা সম্ভব তবে রবি মৌসুমে সব জাতের
জন্য উপযোগী।
বেগুন চাষের জন্য চারা তৈরি
বেগুন চাষের জন্য প্রথমে বীজ তলায় বীজ রোপণ করে চারা উৎপাদন করার পর মূল জমিতে লাগানো হয়। বীজতলা এমন জায়গায় করতে হবে যেখানে ছায়া মুক্ত এবং সু নিষ্কাশিত। জমি প্রথমে ভালোভাবে গভীর করে চাষ দিয়ে নিতে হবে। বীজতলার মাটি উর্বর হতে হবে। যদি বীজ তলার মাটি উর্বর না হয় তাহলে জৈব সার এবং সামান্য পরিমাণ ফসফেট মিশিয়ে ছিটিয়ে দিতে হবে।
চাষের পর জমিকে কয়েকটা বেড আকারে ভাগ করে নিতে হবে। একটা বেড থেকে অন্য বেডের মাঝখানে পানি নিষ্কাশনের জন্য নালা রাখতে হবে। ৫০-৬০ সেন্টিমিটার নালা রাখা জরুরী। যদি অল্প পরিমাণ চারা উৎপাদন করতে চান তাহলে কাঠের বাক্স, ট্রে, বস্তা অথবা বড় টব ব্যবহার করতে পারেন। তবে খেয়াল রাখবেন পানি নিষ্কাশনের জন্য যেন ছিদ্র থাকে। ৩০-৪০ দিনের মধ্যে চারা মূল জমিতে লাগানো হয়ে যায়। তবে মনে রাখবেন বীজ বপনের আগে ১২ ঘন্টা থেকে ২৪ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখলে অঙ্কুরোদগম ভালো হয়।বেগুন চাষের জন্য জমি তৈরি
বেগুন চাষের জন্য জমিতে ৪-৫ টি চাষ দিয়ে মাটি আলগা করে নিতে হবে। চাষ দেওয়ার পর মাটি যদি ঢিলাযুক্ত থাকে তাহলে মই দিয়ে ঝুরঝুর করে নিতে হবে। তবে মনে রাখবেন প্রত্যেকটি চাষের পর ২-৩ জমি ফেলে রাখতে হবে। কারণ জমিতে থাকা ব্যাকটেরিয়া এবং পোকামাকড় থাকলে পাখিরা খেয়ে ফেলে এবং সূর্যের প্রখর তাপে মারা যায়।
বেগুন চাষের জন্য চারা রোপন
বেগুন চাষের জন্য চারা রোপণের দূরত্ব সঠিক রাখা আবশ্যক। কেননা চারার দূরত্ব সঠিক হলে পরিচর্যা করা সহজ হয়। বড় আকারের বেগুনের জাতের ক্ষেত্রে এক চারা থেকে আরেক চারার দূরত্ব ৮০-৯০ সেন্টিমিটার এবংসারি থেকে সারির দূরত্ব ৬০ সেন্টিমিটার। ক্ষুদ্র আকারের বেগুনের জাতের ক্ষেত্রে এক চারা থেকে আরেক চারা দূরত্ব ৭৫ সেন্টিমিটার এবং সারি থেকে সারির দূরত্ব ৫০ সেন্টিমিটার হলেই যথেষ্ট।
মনে রাখবেন, বেগুন চাষ জমি বেড আকারে করতে হয়। গাছ যদি বেশি বড় হয় তাহলে গাছের
সাথে খুঁটি দিতে হবে। এতে করে গাছের ফল পোকামাকড় থেকে রক্ষা পাবে এবং পাতা মাটির
সাথে লেগে থাকলে যে সমস্যাগুলো হয় সেগুলো হবেনা। জমিতে চারা লাগানোর পরপরই চারা
যেন শুকিয়ে না যায় সেজন্য সম্ভব হলে ঝাজরি দিয়ে হালকা করে পানি দিয়ে দিবেন।
আর সম্ভব হলে বিকালের দিকে চারা লাগাবেন।
বেগুন গাছের রোগবালাই
বেগুনের সব থেকে বড় শত্রু হলো ফল ছিদ্রকারী পোকা। জাব পোকা, ছাতরা পোকা, বিছা পোকা, পাতা মোড়ানো পোকা, থ্রিপস, কাটুই পোকা ইত্যাদি বেগুনের ক্ষতি করে থাকে।এ দেশে বেগুনের ঢলে পড়া ও গোড়া পচা দু’টি মারাত্মক রোগ। প্রায় বেগুন ক্ষেতেই এ রোগ দেখা যায়। ফল পচা রোগেও অনেক বেগুন নষ্ট হয়। বীজতলায় ড্যাম্পিং অফ রোগ চারার মড়ক সৃষ্টি করে। এ ছাড়া মোজেইক, ক্ষুদে পাতা, শিকড়ে গিঁট ইত্যাদি রোগও বেগুন ফসলের যথেষ্ট ক্ষতি করে থাকে।
কান্ড ও ফল পচা রোগ রোগ দমনে কার্বেন্ডাজিম জাতীয় ছত্রাকনাশক এইমকোজিম ২০ গ্রাম প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে ১২-১৫ দিন পর পর ২-৩ বার ভালভাবে স্প্রে করতে হবে। গোঁড়া পচা রোগের ক্ষেত্রে মাটি ভিজিয়ে ভালোভাবে স্প্রে করতে হবে।
বাহক পোকা দমনে ইমিডাক্লোরোপ্রিড জাতীয় কীটনাশক এডমায়ার মিলিলিটার ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে স্প্রে করতে হবে ১০ দিন পরপর ২/৩ বার করে।
পাতায় হলদে মোজাইক রোগের বাহক পোকা (জাবপোকা) দমনে ইমিডাক্লোরোপ্রিড জাতীয় কীটনাশক এডমায়ার ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে স্প্রে করতে হবে ১০ দিন পরপর ২/৩ বার।
ফলছিদ্রকারী পোকা দমনে থায়ামিথক্সাম+ক্লোরানিলিপ্রল জাতীয় কীটনাশকঅথবা সাইপারমেথ্রিন জাতীয় কীটনাশক প্রতি ১০লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে স্প্রে করতে হবে ১০-১২ দিন পরপর ২/৩ বার।
বেগুন গাছে সার প্রয়োগ
জমি তৈরির সময় প্রতি বিঘা জমিতে নিচের সার মিশিয়ে দিতে হবে। এই সারগুলো মাটির সঙ্গে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে বীজতলা তৈরির ৫–৭ দিন আগে। গোবর বা কম্পোস্ট সার ৮–১০ টন ,ইউরিয়া ২০–২৫ কেজি,টিএসপি ২৫–৩০ কেজি,এমওপি ১৫–২০ কেজি।
চারা রোপণের ২০–২৫ দিন পর থেকে গাছে পরপর তিনবার সার দিতে হয়।রোপণের ২০ দিন পর প্রথম কিস্তিতে ইউরিয়া সার ১৫ কেজি এবং এমওপি ১০ কেজি গাছের গোড়ায় দিয়ে মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। রোপণের ৪৫ দিন পর দ্বিতীয় কিস্তিতে ১৫ কেজি ১০ কেজি গাছে ফুল আসার সময় প্রয়োগ করতে হবে। রোপণের ৭০ দিন পর তৃতীয় কিস্তিতে ১০ কেজি ১০ কেজি ফল ধরা শুরু হলে প্রয়োগ করতে হবে।
সার প্রয়োগের আগে ও পরে সেচ দিতে হবে।সারটি গাছের চারপাশে হালকা গর্ত করে দিতে হবে, যেন সরাসরি গোড়ায় না লাগে।গাছ বড় হলে পাতলা করে সার পানিতে গুলে প্রয়োগ করলেও ভালো ফল পাওয়া যায়। জৈব সার বিকল্প (যদি রাসায়নিক সার কম ব্যবহার করতে চান)গোবর সার ২–৩ কেজি প্রতি গাছ,ভার্মি কম্পোস্ট: ১–২ কেজি প্রতি গাছ,নিমপাতা বা গাছের বর্জ্য থেকে তৈরি জৈব সার ব্যবহার করলে মাটির উর্বরতা বাড়ে।আরো পড়ুনঃআদার ২০টি উপকারিতা ও অপকারিতা
বেগুন গাছে সার প্রয়োগের সময় সর্তকতা
বালাইনাশক/কীটনাশক ব্যবহারের আগে বোতল বা প্যাকেটের গায়ের লেবেল ভালো করে পড়ুন এবং নির্দেশাবলি মেনে চলুন। ব্যবহারের সময় নিরাপত্তা পোষাক পরিধান করুন।ব্যবহারের সময় ধূমপান এবং পানাহার করা যাবে না। বালাইনাশক ছিটানো জমির পানি যাতে মুক্ত জলাশয়ে না মেশে তা লক্ষ্য রাখুন।
বালাইনাশক প্রয়োগ করা জমির ফসল কমপক্ষে সাত থেকে ১৫ দিন পর বাজারজাত করুন। কীটনাশক ব্যবহার করার পর খালি বোতল বা প্যাকেট পুড়িয়ে ফেলুন অথবা মাটির নিচে পুঁতে ফেলুন। শিশুদের নাগালে বাইরে রাখুন। প্যাকেটের গায়ে লিখা নির্দেশনা বলি মেনে চলুন।
শেষ কথাঃ বেগুন চাষের উপযুক্ত সময় এবং বেগুন চাষের মাটির বৈশিষ্ট্য
প্রিয় পাঠক, আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে বেগুন চাষের উপযুক্ত সময় এবং বেগুন চাষে মাটির বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। অবশ্যই আর্টিকেল পড়ে আপনারা বেগুন চাষের প্রয়োজনীয় সবকিছু বুঝতে পেরেছেন। তবে একটা কথা না বললেই নয় সেটা হলো সবকিছুরই যত্ন লাগে। কথায় আছে যত্ন করলে রত্ন মিলবে। তাই সঠিক পরিচর্যা ও যত্ন করে বেগুন চাষ করে অধিক ফলন ঘরে তোলে আর্থিক লাভবান হন।
পোস্টটি ধৈর্য সহকারে পড়ার জন্য ধন্যবাদ। পোস্টটি পড়ে যদি আপনার ভালো লাগে তাহলে কমেন্ট করবেন। আমাদের নতুন নতুন পোস্ট পেতে ওয়েবসাইটটি সাবস্ক্রাইব করে পাশে থাকা বেল আইকনটি ক্লিক করে আমাদের পাশে থাকবেন। ধন্যবাদ।

ফকটেক ২৪ এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন
comment url