করলা চাষের উপযুক্ত সময় এবং করলা চাষের মাটির বৈশিষ্ট্য
করলা চাষের উপযুক্ত সময় এবং করলা চাষের মাটির বৈশিষ্ট্য নিয়ে অনেকেই দ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকেন। আর নয় দ্বিধাদ্বন্দ্ব আর নয় অজানা আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন করলা চাষের উপযুক্ত সময়, করলা চাষের মাটির বৈশিষ্ট্য।
করলা একটি লতানো সবজি। করলার গাছ উপরে মাদার উপরে হয়ে থাকে এবং করলা লাউ, পটল ,
ঝিঙে মত নিচের দিকে ঝুলে থাকে। করলা তেতো হলেও এটি সবার কাছে পছন্দের একটি
সবজি। তাহলে চলুন দেরি না করে, করলা চাষের উপযুক্ত সময় নিয়ে আলোচনা করি-
পোস্ট সূচিপত্রঃকরলা চাষের উপযুক্ত সময় এবং করলা চাষের মাটির বৈশিষ্ট্য
- করলা চাষের উপযুক্ত সময় এবং করলা চাষের মাটির বৈশিষ্ট্য
- করলা চাষের জন্য মাটির বৈশিষ্ট্য
- করলা চাষের জন্য জলবায়ু
- করলা চাষের জন্য জমি তৈরি
- করলা চাষের জন্য জমির বেড তৈরি
- করলার চারা তৈরি
- করলার জমিতে সার প্রয়োগ
- করলার উন্নত জাত
- করলা গাছে মাচা প্রদান
- করলা গাছের পোকার দমন
- শেষ কথাঃকরলা চাষের উপযুক্ত সময় এবং করলা চাষের মাটির বৈশিষ্ট্য
করলা চাষের উপযুক্ত সময়
বাংলাদেশের জনপ্রিয় সবজির মধ্যে করলা অন্যতম। করলা তেতো হলেও এটি বিভিন্ন ভাবে
রান্না করে খাওয়া যায়। ভাজি, ঝোল অথবা চরচরি যেইভাবে খান না কেন এটি তেতো এবং
পুষ্টিগুণ থাকে। অনেকেই করলা ভাজি রুটি দিয়ে খেতে পছন্দ করেন। আবার করলা
ভাজি গরম ভাতে সাথে আনন্দ বোধ করেন। আবার অনেকেই করলা ভর্তাও খান। তাই করলা
চাষের উপযুক্ত সময় নির্বাচন করা জরুরী। কেননা উপযুক্ত সময়ে করলা চাষ করলে
ফলন ভালো পাওয়া যায় না।
আরো পড়ুনঃআদার ২০টি উপকারিতা ও অপকারিতা
করলা বছরের যেকোনো সময় চাষ করা যায়। তবে শীত না এবং ঠিকমতো ফুল ফল না
ধরার কারণে ফলন ভালো হয় না। খরা মৌসুমে এর ফলন ভালো দেয়। বিশেষ করে
ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসের দিকে বীজ বপন করলে ভালো হয়। তাছাড়া সারা বছর করলা চাষ
করা যায়।
করলা চাষের জন্য মাটির বৈশিষ্ট্য
করলা চাষের জন্য মাটির গুনাগুন ও বৈশিষ্ট্যের ওপর নির্ভর করে ভালো ফলন ঘরে তোলা যায়। করলা সব জমিতে ভাল জন্মে তবে দোআঁশ ও বেলে দোআশ মাটিতে ভালো জন্মে। পানি নিষ্কাশিত উঁচু জমিতে করলার চাষ ভালো হয়। বাণিজ্যিকভাবে করলা চাষ করা যেতে পারে এবং বাড়িতে টবে ছাদবাগান হিসেবে করলা চাষ করতে।
করলা চাষের জন্য জলবায়ু
বাংলাদেশের জলবায়ু করলা চাষের জন্য উপযুক্ত। উষ্ণ ও আদ্র আবহাওয়ায় করলা ভালো
জন্মে। উষ্ণ ও আদ্র জলবায়ুর মাস হল ফেব্রুয়ারি-মার্চ। এই মাসের মধ্যে করলা
চারা লাগালে গাছ তাড়াতাড়ি বড় হয় এবং তাড়াতাড়ি ফলন বাজারজাত করা সম্ভব। তবে
যদি করলার ফুল আসার সময় অত্যাধিক বৃষ্টি হয় তাহলে ফল ধরার ব্যাঘাত ঘটে।
করলা চাষের জন্য জমি তৈরি
করলা চাষ করতে হলে প্রথমে জমি চাষ দিয়ে নিতে হবে। কমপক্ষে ৪-৫ টা চাষ দিয়ে জমি
থেকে আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। জমির মাটি যদি ঢিলাযুক্ত হয় তাহলে মই দিয়ে
মাটিগুলো ঝুরঝুরা করে নিতে হবে। চারা রোপনের ১০-১২ দিন পূর্বে জমি চাষ করে প্রখর
রোদে ফেলে রাখতে হবে। এতে করে জমিতে থাকা পোকামাকড় পাখি অথবা সূর্যের তাপে মরে
যাবে। তবে জমিকে বেড আকারে করলার চারা লাগাতে হবে।
করলা চাষের জন্য জমির বেড তৈরি
করলা চাষ মূলত বেড আকারে করা হয়। প্রতিটি বেডের দৈর্ঘ্য জমির পরিমাণ অনুযায়ী হতে পারে। প্রস্থ 1.5 মিটার। বেডের উচ্চতা 25 থেকে 30 সেন্টিমিটার এবং দুই বেডের মাঝখানে ৫০-৬০ সেন্টিমিটার নালা রাখতে হবে কারণ জমিতে সেচ দেওয়ার সময় অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশনের জন্য। প্রতিটি বেডে ২৫- ৩০ সেন্টিমিটার দূরত্বে চারা বপন করতে হবে। এবং প্রত্যেকটি প্রত্যেকটি গর্তে দুটি করে চারা রোপন করতে হবে।
করলার চারা তৈরি
করলার চারা তৈরি করা যায় দুইভাবে।এক হল পলিথিনে অন্যটি হলো সরাসরি জমিতে। পলিথিনের ব্যাগে চারা তৈরি করলে প্রত্যেকটি পলিব্যাগে দুটো করে বীজ বোপন করতে হবে। পলিথিনের ব্যাগে জৈব সার মিশ্রিত এবং ছাই মাটি দিয়ে ভর্তি করতে হবে। পলিথিনের ব্যাগে যেন নিচের দিকে ফুটো থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে কারণ অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
জমিতে চারা উৎপন্ন করতে হলে জমি চাষ দিয়ে নিয়ে এর মধ্যে গোবর,ছাই মাটি একসাথে মিশিয়ে রাখতে হবে তারপর বীজ বপন করে দিতে হবে। তবে একটা কথা খেয়াল রাখতে হবে যে আপনি জমিতে বীজ বপন করেন বা পলিব্যাগে বীজ বপন করেন বপনের পূর্বে ২৪ ঘন্টা বীজগুলো পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। এতে অঙ্কুরোদগম ভালো হয়। ১৫-২০ দিনের মধ্যে চারা রোপণের জন্য উপযুক্ত। তারপর জমি থেকে তুলে মূল জমিতে স্থানান্তর করতে পারেন।
করলার জমিতে সার প্রয়োগ
করলার জমিতে জৈব এবং অজৈব সার মিশিয়ে একত্রে দেওয়া যায়। জৈব সার হলো ইউরিয়া, পটাশ, ডিএপি, সালফা ইত্যাদি। অজৈব সার যেমন গোবর, ছাই , বালুমাটি ইত্যাদি। জৈব এবং অজৈব সার মিশিয়ে জমিতে দিলে করলার ভালো ফলন পাওয়া যায়। যদি জমির PH মাত্রা ৬.0-৬.৫ থাকলে করলার চাষ ভালো হয়।
করলার উন্নত জাত
বাংলাদেশে বর্তমানে অনেক উন্নত জাতের করলা রয়েছে। যেমন বারি করোলা-১, বারি করলা-২,বারি করলা-৩, উত্তরা করলা, জয়া করলা, দুর্বার করলা,বারি করলা-৪ এগুলো উন্নত জাতের করলার জাত। এগুলো উচ্চ ফলনশীল এবং রং ভালো এবং বিঘা প্রতি ৯ টন থেকে শুরু করে ১২ টন পর্যন্ত ফলন দেয়।
করলা গাছে মাচা প্রদান
লতানো গাছে মাচা দেওয়া আবশ্যক। মাচা দিলে ফলঝুলে থাকে এবং ফলের পচার হাত থেকে রক্ষা পায়।চারা লাগানোর ১৫–২০ দিন পর, যখন গাছ লতানো শুরু করে, তখনই মাচা দিতে হবে।খুঁটিগুলো ৫–৬ ফুট দূরত্বে বসান।খুঁটির ওপর অংশে দড়ি টেনে একে অপরের সাথে যুক্ত করুন।উপরে আড়াআড়ি দড়ি বা জাল টানুন যেন লতা উপরে উঠে ছড়িয়ে যেতে পারে।মাচার উচ্চতা মাটির থেকে প্রায় ৫–৬ ফুট রাখুন।
ফল মাটিতে না পড়ে পচে না।লতা বাতাস ও আলো পায় রোগ কম হয়।ফল সোজা ও আকর্ষণীয় হয়।তুলতে ও পরিচর্যা করতে সুবিধা হয়।ফলন ২০–৩০% পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। তাই করলা গাছে মাচা দেওয়া জরুরী।
করলা গাছের পোকার দমন
করলা গাছে তেমন বেশি পোকা-মাকড়ের আক্রমণ দেখা যায় না। তবে ফলের মাছি পোকা, লাল কুমড়া বিটল ও কাঁঠালে পোকার আক্রমণ হতে পারে।স্ত্রী মাছি পোকা কচি ফলের গায়ে ২-৫টি ডিম পাড়ে। ডিম ফুটে পোকার কিড়াগুলো আক্রান্ত ফলে ভেতর ঢুকে এবং ফলের শাঁস খায়। আক্রান্ত ফল অকালে ঝরে পড়ে।
আক্রান্ত ফল কিড়াসহ সংগ্রহ করে মাটির গভীরে পুঁতে ফেলতে হবে। বিষটোপ ও ফেরোমোন ফাঁদ ব্যবহার করতে হবে। একটি মাটির পাত্রে ১০০ গ্রাম থেতলানো মিষ্টি কুমড়ার সঙ্গে ০.২৫ গ্রাম সেভিন ৮৫ ডাবিস্নউপি মিশিয়ে বিষটোপ তৈরি করতে হবে। বিষটোপ ৩-৪ দিন পর পর পরিবর্তন করতে হবে। আক্রমণ বেশি হলে রিপকর্ড বা সিমবুশ ২০ ইসি প্রতিলিটার পানির সঙ্গে ১ মিলি হারে মিশিয়ে ১৫ দিন অন্তর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।
এ পোকা দমনের জন্য জমি সর্বদা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। হাত দিয়ে পোকা সংগ্রহ করে মেরে ফেলতে হবে। এছাড়া জমিতে সুমিথিয়ন বা ফলিথিয়ন জাতীয় কীটনাশক প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলি হারে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।রোগমুক্ত বীজ বপন করতে হবে। রোগ দেখা দিলে প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম থিয়োভিট মিশিয়ে ১০-১৫ দিন অন্তর স্প্র্রে করতে হবে।
শেষ কথাঃকরলা চাষের উপযুক্ত সময় এবং করলা চাষের মাটির বৈশিষ্ট্য
প্রিয় পাঠক, আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে করা চাষের উপযুক্ত সময় এবং কলা চাষে
মাটির বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। অবশ্যই আর্টিকেল পড়ে আপনারা করলা
চাষের প্রয়োজনীয় সবকিছু বুঝতে পেরেছেন। তবে একটা কথা না বললেই নয় সেটা হলো
সবকিছুরই যত্ন লাগে। কথায় আছে যত্ন করলে রত্ন মিলবে। তাই সঠিক পরিচর্যা ও
যত্ন করে করলা চাষ করে অধিক ফলন ঘরে তোলে আর্থিক লাভবান হন।
পোস্টটি ধৈর্য সহকারে পড়ার জন্য ধন্যবাদ। পোস্টটি পড়ে যদি আপনার ভালো লাগে তাহলে কমেন্ট করবেন। আমাদের নতুন নতুন পোস্ট পেতে ওয়েবসাইটটি সাবস্ক্রাইব করে পাশে থাকা বেল আইকনটি ক্লিক করে আমাদের পাশে থাকবেন। ধন্যবাদ।



ফকটেক ২৪ এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন
comment url