মাথার ব্রেন ভালো রাখার উপায়-আপনার হাতেই আছে
মাথার ব্রেন ভালো রাখার উপায় সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? তাহলে এই আর্টিকেলটি হতে পারে আপনার জন্য বেস্ট। আজকের এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে জানতে পারবেন মাথার ব্রেন ভালো রাখার উপায় এবং কি করলে মাথার ব্রেন বৃদ্ধি পায়।
মানুষের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মধ্যে ব্রেন হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। এ ব্রেন ভালো রাখতে পুষ্টিকর খাবার, নিয়মিত ব্যায়াম, শারীরিক এবং মানসিকভাবে সুস্থ থাকার হচ্ছে মূল বিষয়। তাহলে চলুন দেরি না করে মূল আলোচনা তথা মাথার ব্রেন ভালো রাখার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাক-পোস্ট সূচিপত্রঃ মাথার ব্রেন ভালো রাখার উপায়
- মাথার ব্রেন ভালো রাখার উপায়
- মস্তিষ্ককে ভালো রাখতে নতুন কিছু জানার চেষ্টা করুন
- ব্রেনকে ভালো রাখতে পঞ্চ ইন্দ্রকে কাজে লাগান
- জাঙ্ক ফুড এড়িয়ে চলুন মস্তিষ্ক ভালো রাখতে
- মস্তিষ্ক ভালো রাখার জন্য ব্যায়াম
- সঠিক খাবার খান মস্তিষ্ক ভালো থাকবে
- ব্রেন ভালো রাখতে ধূমপান ত্যাগ করুন
- মস্তিষ্ক ভালো রাখতে পর্যাপ্ত ঘুমান
- কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন?
- শেষ কথাঃ মাথার ব্রেন ভালো রাখার উপায়
মাথার ব্রেন ভালো রাখার উপায়
মাথার ব্রেন অথবা মস্তিষ্ক মানব দেহের এমন একটি অংশ যা ছাড়া মানুষ, মানুষ বলে বিবেচিত হয় না। কারণ একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ হতে গেলে তার বিবেক-বুদ্ধি, ভালো-মন্দ, আত্ম সংযম থাকা জরুরি। মাথায় ব্রেন বা মস্তিষ্ক সুস্থ রাখতে পারেন আপনি নিজেই। ভালো কিছু অভ্যাস আপনার শরীর, মন এবং মস্তিষ্ক সচল রাখতে সাহায্য করে।
আমাদের শরীরের ভালো-মন্দ সবকিছুই আমাদের হাতে। আমরা যদি ভালো ভাবে জীবন যাপন করতে
পারি এবং প্রত্যেকটি অঙ্গ প্রত্যঙ্গের সঠিক ব্যবহার এবং এর পরিচর্যা করতে পারি
তাহলে শরীর সুস্থ থাকার পাশাপাশি মন থাকবে প্রফুল্ল এবং মস্তিষ্ক হবে তীক্ষ্ণ
বুদ্ধি সম্পন্ন। আমাদের মস্তিষ্ক বা মাথা ব্রেন ভালো রাখার উপায়
আমাদেরই বের করতে হবে। তাহলে চলুন মাথার ব্রেন ভালো রাখার উপায়
সম্পর্কে জানা যাক-
মস্তিষ্ককে ভালো রাখতে নতুন কিছু জানার চেষ্টা করুন
নতুন নতুন জিনিস শেখার চেষ্টা করুন। নতুন দক্ষতা শেখার মাধ্যমে মস্তিষ্ককে ব্যস্ত
রাখা স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। একটি নতুন বই পড়া একটি নতুন ভাষা শেখা বা
একটি নতুন শখ বাছাই করা মত সাধারন কাজগুলো আমাদের মস্তিষ্ককে উদ্দীপিত করতে পারে।
আপনি যদি ক্রমাগত শেখার ফলে মস্তিষ্ক প্লাস্টিটি বৃদ্ধি পায়, যা মস্তিষ্ক ভালো
রাখে এবং ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি কমায়।
আরও পড়ুনঃসকালে খালি পেটে মধু ও কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম
আপনি যদি প্রতিদিন কোরআন তেলাওয়াত করেন তরজমাসহ তাহলে আপনার মস্তিষ্ক
ব্যস্ত থাকবে নতুন কিছু শিখতে পারবেন। যা আপনার মস্তিষ্কের জন্য খুব ভালো।
তাছাড়া আপনি যদি বই পড়েন, যে বই আপনার পছন্দ কিন্তু নতুন বই পড়তে হবে জানার
আগ্রহ বাড়াতে হবে তাহলে আপনার মস্তিষ্ক বা ব্রেন ভালো থাকবে। আপনার ব্রেনকে যত
কাজে লাগাতে থাকবেন সে তত তীক্ষ্ণ এবং সুস্থ থাকবে।
মস্তিষ্ককে তীক্ষ্ণ রাখার একটি দুর্দান্ত উপায় হচ্ছে গণিত অনুশীলন। এটি আমাদের মস্তিষ্ককে দ্রুত চিন্তা করার জন্য চ্যালেঞ্জ করে এবং সমস্যা সমাধানের দক্ষতা উন্নত করে। তাই ক্যালকুলেটর ব্যবহার না করে মোট খরচ নিজেই গণনা করার চেষ্টা করুন।
ব্রেনকে ভালো রাখতে পঞ্চ ইন্দ্রকে কাজে লাগান
সমস্ত ইন্দ্রিয় ব্যবহার করার চেষ্টা করুন। এটি মস্তিষ্ককে বা মাথার ব্রেন কে সক্রিয় এবং সতর্ক রাখতে সাহায্য করে। দৃষ্টি, শব্দ, স্পর্শ, স্বাদ এবং গন্ধ জড়িত এমন কার্যকলাপ মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশকে উদ্দীবিত করতে পারে। মনে করেন যে আপনি নিজের থেকে কোন কিছু রান্না করলেন এতে আপনার মস্তিষ্ক কাজ করছে। এতে আপনার দৃষ্টি, শব্দ, স্পর্শ, স্বাদ এবং গন্ধ জড়িত আছে। এতে আপনার একাধিক ইন্দ্রিয়কে নিযুক্ত করতে পারে, যা স্নায়ু সংযোগকে শক্তিশালী করে।
এছাড়াও আপনি বাগানের কাজ করতে পারেন। বাগানের কাজ করলেও আপনার সমস্ত
ইন্দ্রিয় সচল থাকে। আপনার কাছে যেই কাজ সব থেকে বেশি ভালো লাগে সেই কাজগুলো
করুন। দেখবেন আপনার মস্তিষ্ক বা ব্রেন অনেক ফ্রেশ এবং তীক্ষ্ণ হবে। তাই
আপনার ব্রেন ভালো রাখার উপায় আপনার হাতে আছে যদি আপনি তার সঠিক ব্যবহার করেন।
জাঙ্ক ফুড এড়িয়ে চলুন মস্তিষ্ক ভালো রাখতে
মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে জাঙ্ক ফুড, বিশেষ করে চিনিযুক্ত পানীয় এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার, এড়িয়ে চলুন। জাঙ্ক ফুডে থাকা অতিরিক্ত চিনি ও চর্বি মস্তিষ্কে প্রদাহ সৃষ্টি করে, যা স্মৃতিশক্তির ক্ষতি করতে পারে এবং মনোযোগ কমিয়ে দিতে পারে। জাঙ্ক ফুডে থাকা অতিরিক্ত চিনি ও চর্বি মস্তিষ্কে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষ করে স্মৃতির কেন্দ্র হিপ্পোক্যাম্পাসে, উল্লেখ করে Psychology Today।
জাঙ্ক ফুড মস্তিষ্কের রিসেপ্টরগুলোকে পরিবর্তন করতে পারে, যা আত্মনিয়ন্ত্রণ কমিয়ে দেয় এবং অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা বাড়ায়।প্রক্রিয়াজাত খাবারে থাকা সংযোজন, রং এবং প্রিজারভেটিভ মস্তিষ্কের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে এবং এর কার্যকারিতা কমিয়ে দিতে পারে।উচ্চ শর্করাযুক্ত খাবার রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত পরিবর্তন করে, যার ফলে উদ্বেগ, বিভ্রান্তি ও ক্লান্তি দেখা দিতে পারে।
মস্তিষ্ক ভালো রাখার জন্য ব্যায়াম
অ্যারোবিক ব্যায়াম শুধু আমাদের শরীরের জন্যই ভালো নয়, এটি আমাদের মস্তিষ্কের জন্যও চমৎকার। হাঁটা, সাঁতার কাটা এবং সাইকেল চালানোর মতো কাজগুলো মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহ বাড়ায়, নতুন নিউরনের বৃদ্ধিকে উত্সাহিত করে এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নতি করে। নিয়মিত অ্যারোবিক ব্যায়াম স্মৃতিশক্তি বাড়াতে পারে, উদ্বেগ কমাতে পারে এবং বয়স-সম্পর্কিত মস্তিষ্কের ক্ষতি থেকে আমাদের রক্ষা করতে পারে।
আর পড়ুনঃভাতের মাড় খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
মস্তিষ্ক বা মাথার ব্রেন ভালো রাখার উপায় হল নিয়মিত ব্যায়াম করা। শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করতে পারেন এতে করে আপনার শ্বাস-প্রশ্বাস দীর্ঘ হবে এবং স্নায়ুবিদ সমস্যা দূর হবে। নিয়মিত হাটার অভ্যাস করুন, যোগব্যায়াম করুন এতে আপনার শরীর ফিট থাকার পাশাপাশি নিউরনের উন্নতি হবে।
সঠিক খাবার খান মস্তিষ্ক ভালো থাকবে
আপনি যে পরিমাণ শক্তি ও গ্লুকোজ গ্রহণ করেন তার ২০ শতাংশ সরাসরি আপনার মস্তিষ্কে যায়। এ কারণে আপনার মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা নির্ভর করে দেহের গ্লুকোজের পরিমাণের উপর। আপনার দেহে গ্লুকোজের মাত্রা যদি নিয়ন্ত্রণে না থাকে তাহলে আপনার মন মস্তিষ্ক অনেকটাই ঝাপসা মনে হতে পারে। আমরা যখন পছন্দের খাবার খায় তখন মস্তিষ্কে ডোপামিন নামক হরমোন নির্গত হয়। এতে আমাদের অনেকটা শান্তি লাগে।
শুধু মস্তিষ্ককে শান্তি দিলে হবে না, পেটের ক্ষুধা নিবারণ করতে হবে।মানুষের পরিপাকতন্ত্রে প্রায় ১০০ ট্রিলিয়ন অণুজীব থাকে। এরা স্নায়ু ব্যবস্থার মাধ্যমে মস্তিষ্কের সাথে যুক্ত থাকে। আর তাই মস্তিষ্ককে সুস্থ রাখতে হলে এসব অণুজীবের একটা ভারসাম্য রাখতে হয়।মস্তিষ্কের কোষ চর্বি দিয়ে গঠিত। তাই খাবার থেকে চর্বি একেবারে বাদ দেয়াটা ঠিক নয়। বিভিন্ন রকমের বাদাম, বীজ, অ্যাভোকাডো, মাছ, রোজমেরি ও হলুদ থেকে প্রাপ্ত ফ্যাটি অ্যাসিড মস্তিষ্কের জন্য ভালো।
ব্রেন ভালো রাখতে ধূমপান ত্যাগ করুন
ধূমপান ও অতিরিক্ত অ্যালকোহল গ্রহণ মস্তিষ্কের কোষ ধ্বংস করতে পারে এবং স্মরণশক্তি দুর্বল করে।তাই ধূমপান সম্পূর্ণ ত্যাগ করুন এবং মদ্যপানে সীমারেখা টানুন। ধূমপান ও অতিরিক্ত অ্যালকোহল গ্রহণের ফলে নিউরনের সাথে যুক্ত কোষগুলো ধীরে ধীরে অক্ষম হতে থাকে। সেই কারণে স্মৃতিশক্তি দুর্বল হওয়া, কোন কিছু মনে করতে না পারা প্রভৃতি সমস্যা দেখা দেয়।
মাথার ব্রেন ভালো রাখার উপায় হল ধূমপান ও অতিরিক্ত অ্যালকোহল গ্রহণ
থেকে বিরত থাকুন। এতে আপনার শরীরের পাশাপাশি মস্তিষ্ক বা ব্রেন দুটোই ভালো থাকবে।
নিকোটিনের ফলে শরীরে ক্যান্সার, যক্ষা এবং মস্তিষ্ক বিকল হওয়ার মতো
মারাত্মক ঝুঁকি হতে পারে।
মস্তিষ্ক ভালো রাখতে পর্যাপ্ত ঘুমান
ঘুম হলো পুরো শরীরে একটি খাদ্য। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে মেজাজ খিটখিটে, কোন কিছু ভালো লাগে না। তাই ঘুমের সময় মস্তিষ্ক বর্জ্য পদার্থ দূর করে, যা ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি কমায়।দিনে অন্তত ৬-৮ ঘণ্টা গভীর ও টানা ঘুম দরকার।যারা দিনে ৫ ঘণ্টার কম ঘুমান তাদের ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি দ্বিগুণ এবং মৃত্যুঝুঁকি ২.৪ গুণ বেশি।
কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন?
বয়স বাড়ার সাথে সাথে কিছুটা ভুলে যাওয়া স্বাভাবিক, তবে যদি বারবার একই প্রশ্ন করেন, পরিচিত মানুষের নাম ভুলে যান, দৈনন্দিন কাজে অসুবিধা হয়। একজন মানুষের আচরণ অস্বাভাবিক মনে হলে যেমন কোন কিছু চিনতে না পারা, একই কাজ বারবার করা এইরকম অস্বাভাবিক কিছু করলে সাথে সাথে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
তাছাড়া সুস্থ মানুষও চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন। যে কি কাজ করলে মস্তিষ্ক
ভালো থাকবে, কোন খাবার খেলে মস্তিষ্ক ভালো থাকবে, কিভাবে মস্তিষ্কে চাপ কমানো
যায় এসব বিষয়ে পরামর্শ নিতে ডক্টরের শরণাপন্ন হতে পারেন।
শেষ কথাঃ মাথার ব্রেন ভালো রাখার উপায়
প্রিয় পাঠক,মস্তিষ্কের সুস্থতা বজায় রাখা কোনো কঠিন কাজ নয়। একটু সচেতনতা, নিয়মিত অভ্যাস এবং ইতিবাচক জীবনধারা গড়ে তুললেই বয়স বাড়লেও বুদ্ধি ও স্মৃতি ধরে রাখা যায়।আপনার চারপাশে যদি কেউ বয়সজনিত স্মৃতিভ্রান্তি বা মনোযোগ কমে যাওয়ার সমস্যায় ভোগেন, তাহলে এই লেখাটি তাদের সঙ্গে অবশ্যই শেয়ার করুন।
আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ে মাথার ব্রেন ভালো রাখার উপায় সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। মাথার ব্রেন ভালো রাখার জন্য আহামরি কোন কঠিন কাজ করতে হয় না। নিজেকে সবসময় হাসিখুশি, বিভিন্ন কাজ, খেলাধুলায়, পড়াশোনায় ব্যস্ত রাখলে শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি মাথা ব্রেনও ভালো থাকবে। এতক্ষণ ধরে ধৈর্য সহকারে আর্টিকেল করার জন্য ধন্যবাদ।


ফকটেক ২৪ এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন
comment url