কাঁচা লবণ খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
কাঁচা লবণ খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে অনেকের অজানা থাকার কারণে হরহামেশা কাঁচা লবণ খেয়ে থাকে মানুষ। তাই আজকে আর্টিকেলের মাধ্যমে কাঁচা লবণ খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আপনারা জানতে পারবেন।
কাঁচা লবণ খাওয়া সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে আপনাকে আর্টিকেলের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ভালোভাবে পড়তে হবে। তাহলে আপনি জানতে পারবেন কাছা লবণ খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। তাহলে চলুন দেরি না করে বিস্তারিত আলোচনায় যাই।
পোস্ট সূচীপত্রঃকাঁচা লবণ খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
- কাঁচা লবণ খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
- কাঁচা লবণ খাওয়ার উপকারিতা
- কাঁচা লবণ খাওয়ার অপকারিতা
- অতিরিক্ত লবণ খেলে কি হয়
- প্রতিদিন কতটুকু লবণ খাওয়া উচিত
- ভাজা লবণ খেলে কি হয়
- লবণ না খেলে কি হয়
- গর্ভাবস্থায় কাঁচা লবণ খেলে কি হয়
- মন্তব্যঃ কাঁচা লবণ খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
কাঁচা লবণ খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
লবণ খাদ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। লবণ ছাড়া আমরা খাবারের স্বাদ কল্পনাও করতে
পারি না। লবণ যেমন খাদ্যের স্বাদ বাড়ায় ঠিক তেমনি লবণ শরীরে পানির ভারসাম্য
রক্ষা করে। লবণের তারতম হলে খাবারের স্বাদ নষ্ট হয়ে যায়। অনেকেই তরকারিতে
বেশি লবণ খান, আবার অনেকেই ভাতের সাথে কাঁচা লবণ খেয়ে থাকেন। এটা কিন্তু ঠিক
নয়। লবণের উপকারিতার পাশাপাশি কাঁচা লবণ খেলে শরীরে বিভিন্ন রকমের রোগের
বাসা বাঁধতে পারে।
খাদ্যে লবণের পরিমাণ সীমিত রাখা ভালো। অতিরিক্ত লবণ খাওয়া শরীরের ক্ষতির কারণ।
অতিরিক্ত লবণ বা কাঁচা লবণ খেলে যেসব রোগ হয়, তা হল ব্লাড প্রেশার বেড়ে যায়,
স্থূলতার শিকার হয়, পেটে ক্যান্সার হয়, কিডনিতে পাথর, হৃদরোগ,
স্ট্রোক আরো অনেক রোগের বাসা হতে পারে আপনার একটু খাবারে জন্য। তাই একজন
মানুষ প্রতিদিন কতটুকু লবণ খেতে পারবেন এবং অতিরিক্ত বা কাঁচা লবণ খেলে
কি হয় তা জেনে লবণ ব্যবহার করা উচিত।
কাঁচা লবণ খাওয়ার উপকারিতা
কাঁচা লবণ খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে এসেছেন? তাহলে আপনি সঠিক ওয়েবসাইটে এসেছেন। কাঁচা লবণ খাওয়া শরীরের জন্য সরাসরি কোন উপকার নেই। তবে হাতে গোনা কয়েকটি উপকার পাওয়া যায় পরিমিত লবণ খেলে। যেমন ইলেকট্রোলাইট ভারসাম্য, স্নায়ু পেশীর কার্যকারিতা এবং হাইড্রেশনের জন্য অপরিহার্য।
যা প্রতিদিনের রান্না করা খাবার থেকেই পূরণ হয়ে যায়। কাঁচা লবণ খেলে উপকারিতার চেয়ে অপকারিতা বেশি।কাঁচা লবণ সরাসরি খাওয়া শরীরের জন্য উপকারী নয়, বরং অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, স্ট্রোক ও কিডনির রোগের ঝুঁকি বাড়ে।
কাঁচা লবণ খাওয়ার অপকারিতা
কাঁচা লবণ খাওয়া শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর। লবণ হলো সোডিয়াম ক্লোরাইড যার শরীরের
জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলেও অতিরিক্ত সেবনের ফলে স্বাস্থ্য ঝুঁকি হতে
পারে। কাঁচা লবণ খাওয়ার ফলে শরীরে সোডিয়ামের মাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি পায় যা
বিভিন্ন স্বাস্থ্য ঝুঁকি সৃষ্টি হতে পারে।
অতিরিক্ত লবণ খাওয়ার ফলে রক্তে সোডিয়ামের মাত্রা বেড়ে যায়। এর ফলে শরীরে রক্ত
বেড়ে যায় এবং অতিরিক্ত রক্ত প্রবাহে কারণে রক্তচাপ বেড়ে যায়। উচ্চ রক্তচাপ বা
হাইপারটেনশন দীর্ঘমেয়াদি হলে হৃদরোগ, স্টোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
অতিরিক্ত কাঁচা লবণ সেবনের ফলে শরীরের বিভিন্ন অংশে পানি জমা হয়। হাত,
পা, মুখমণ্ডল বা শরীরের বিভিন্ন অংশে পানি জমে। যা দেখতে ফোলাভাব মনে
হয়। এটি দীর্ঘমেয়াদী হলে বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে।
কিডনি হল মানব শরীরের ফিল্টার। এই ফিল্টার শরীরের বিভিন্ন বজ্র পদার্থ ও
অতিরিক্ত তরল পদার্থ বাহিরে বের করে দেয়। অতিরিক্ত লবণ বা কাঁচা লবন খেলে কিডনির
কার্যক্ষমতা কমে যায়। ফলে বর্জ্য পদার্থগুলো বাহিরে বের হতে না পেরে কিডনির
সমস্যা ও কিডনিতে পাথর দেখা দেয়।
অতিরিক্ত লবণ খেলে বা কাঁচা লবন খেলে ইনস্ট্যান্ট কোন সমস্যা না হলেও বৃদ্ধ বয়সে
এর প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। যেমন অতিরিক্ত লবণ সেবনের ফলে হারে যে ক্যালসিয়াম
থাকে সেই ক্যালসিয়ামকে ক্ষয় করে। পরে বৃদ্ধ বয়সে দেখা যায় বিভিন্ন জয়েন্টে
ব্যথা এবং হাড় ক্ষয়ের মত বিভিন্ন রোগ।
আপনার পছন্দ হতে পারেঃবিবাহিত পুরুষদের প্রতিদিন সকালের খাবার
অতিরিক্ত লবণ খাওয়ার ফলে পেটে গ্যাস হতে পারে। অতিরিক্ত লবণযুক্ত খাবার ফেলে
পাকস্থলীতে এসিডিটি সৃষ্টি করে। যা পরবর্তীতে বদহজম, বমি বমি ভাব, পেটের অস্বস্তি
দেখা দিতে পারে। তাই অতিরিক্ত লবণ বা কাঁচা লবণ খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। আপনারা
কাঁচা লবণ খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানার জন্য পুরো
আর্টিকেলটি পড়ুন।
তাছাড়া অতিরিক্ত লবণ খাওয়ার ফলে শরীর স্থূলতার শিকার হয়। কারণ লবণ শরীরের
বিভিন্ন অংশে মাংসপেশী বৃদ্ধি করে। যা একসময় স্থূলতার শিকার হয়।
অতিরিক্ত লবণ খেলে কি হয়
আমরা অনেকেই জানিনা অতিরিক্ত লবণ খেলে কি হয়। অতিরিক্ত লবণ খেলে ওজন বৃদ্ধি সহ
নানা রোগের দানা বাধে শরীরের মধ্যে। লবন হলো সোডিয়াম ক্লোরাইড যার শরীরে
পানির ধরে রাখতে সক্ষম। আর এই পানি অতিরিক্ত হলে হাত-পা , মুখমন্ডল ফুলে
যায়।
- উচ্চ রক্তচাপঃখাদ্যে অতিরিক্ত সোডিয়াম গ্রহণ করলে রক্তে জলের পরিমাণ বেড়ে যায়, যা রক্তনালির ওপর চাপ সৃষ্টি করে এবং উচ্চ রক্তচাপের কারণ হয়।
- হৃদরোগঃউচ্চ রক্তচাপের কারণে হার্ট অ্যাটাক এবং হার্ট ফেইলিউরের মতো হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে।
- কিডনি রোগঃঅতিরিক্ত লবণ কিডনির উপর চাপ সৃষ্টি করে, যা কিডনি পাথর এবং অন্যান্য কিডনি রোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
- গ্যাস্ট্রিক ও ক্যান্সারঃ অতিরিক্ত লবণ গ্যাস্ট্রিক এবং কিছু ক্যান্সারের ঝুঁকিও বাড়ায়।
- অস্টিওপোরোসিসঃঅতিরিক্ত লবণ গ্রহণের ফলে হাড়ের স্বাস্থ্যও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
প্রতিদিন কতটুকু লবণ খাওয়া উচিত
আপনারা হয়তো এতক্ষণ বুঝতে পেরেছেন লবণ খাওয়া উপকারিতা এবং অপকারিতা
সম্পর্কে। লবণ আমরা প্রতিদিন কমবেশি খেয়ে থাকে। কেউ কেউ আবার বিভিন্ন
খাবারের সাথে কাঁচা লবণ খেয়ে থাকেন। যদি আপনি বয়স অনুযায়ী পরিমাণ মতো লবণ
ব্যবহার করতে পারেন তাহলে আপনার উপকার হবে। আর যদি অতিরিক্ত লবণ ব্যবহার করে
তাহলে স্বাস্থ্য ঝুঁকি হবে।
সাধারণত চারজনের পরিবারের মাসে এক কেজি লবণ ব্যবহৃত হয়। যা প্রতিদিন ৯-১২ গ্রাম লবণ ব্যবহার করা পড়ে। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে যে, দৈনিক ৫ গ্রাম বা এক চা চামচ ব্যবহার করা উচিত। তবে বয়স ভেদে মাপের তারতম্য হতে পারে। দৈনিক হাফ চামচ থেকে এক চামচ পরিমাণ লবণ ব্যবহার করলে দেশে মৃত্যুর হার ২৫ লাখের কম হবে। নিচের বয়সের তারতম্যে ওপর ভিত্তি করে লবণ ব্যবহারের পরিমাণ দেওয়া হল-
- ১-৩ বছর -২ গ্ৰাম
- ৪-৬ বছর - ৩ গ্ৰাম
- ৭-১০ বছর- ৪গ্ৰাম
- ১১ থেকে এর বেশি-৫গ্রাম
ভাজা লবণ খেলে কি হয়
অনেকেই মনে করে যে কাঁচা লবণ খাওয়ার থেকে লবণ ভেজে বা টেলে খেলে কোন
স্বাস্থ্য সমস্যা হয় না। এটা একদম ভুল ধারণা। কারণ কাঁচা লবণ ভেজে খেলে কোন
ফায়দা নেই। কারণ কাঁচা লবণে যে সোডিয়াম থাকে ভেজে বা টেলে খেলে সে
সোডিয়ামই থেকে যায়। তাই ভাজা লবণ বা কাঁচা লবণ খান না কেন, অতিরিক্ত সেবনের ফলে
স্বাস্থ্যের প্রতি হতে পারে।
আরো পড়ুনঃসকালে খালি পেটে মধু ও কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম
ভাজা লবণ খেলে বিশেষ কোনো উপকার নেই, বরং অতিরিক্ত লবণ খেলে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, স্ট্রোক, কিডনি রোগ, হাড়ের ক্ষয় এবং গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে।ভাজা লবণ কেবল রান্নার একটি পদ্ধতি, যা অতিরিক্ত তেল শোষণ রোধ করে খাবারের স্বাদ ও পুষ্টি ধরে রাখতে সাহায্য করতে পারে, কিন্তু এতে লবণের সোডিয়ামের পরিমাণ কমে না।
লবণ না খেলে কি হয়
লবণ না খেলে রক্তে সোডিয়ামের পরিমাণ কমে যায়, যা হাইপোনেট্রিমিয়া নামে পরিচিত, এবং এর ফলে মাথাব্যথা, মাথা ঘোরা, বমি বমি ভাব, দুর্বলতা, মানসিক ভারসাম্যহীনতা, এবং গুরুতর ক্ষেত্রে খিঁচুনি বা মূর্ছা যাওয়ার মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে। এই অবস্থা চরম পর্যায়ে পৌঁছালে জীবন সংশয়ও হতে পারে, তাই লবণ গ্রহণ একেবারেই বন্ধ করা উচিত নয়।
- মাথাব্যথা, মাথা ঘোরা বা ঝাপসা দৃষ্টি
- বমি বমি ভাব এবং বমি
- দুর্বলতা ও অবসাদ
- মানসিক ভারসাম্যহীনতা, যেমন – হতাশা বা অসংলগ্ন কথাবার্তা বলা
- জ্ঞান হারানো বা মূর্ছা যাওয়া
- খিঁচুনি
- খুব বেশি কমে গেলে হার্টের সমস্যা হতে পারে
গর্ভাবস্থায় কাঁচা লবণ খেলে কি হয়
গর্ভাবস্থায় একজন মায়ের কাঁচা লবণ খাওয়া একদমি উচিত নয়। কারণ কাঁচা লবণ খেলে রক্তচাপ বেড়ে যায় যার ফলে গর্ভাবস্থায়ী হৃদরোগের আরো দ্বিগুণ গুণ ঝুঁকি বেড়ে যায়। এজন্য একজন গর্ভবতী মায়ের শুধুমাত্র রান্নার স্বাদ বাড়ানোর মতো লবণ খাওয়া উচিত। অথবা গর্ভবতী মায়ের লবন খাওয়া কমিয়ে দিলে মা ও শিশুর স্বাস্থ্যের ক্ষতি হতে পারে।
অতিরিক্ত পরিমাণে লবণ খেলে গর্ভবতী মা ফুলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কারণটা আপনারা ইতিমধ্যে জেনেছেন অতিরিক্ত লবণ খেলে শরীরে পানি ধরে রাখে, কারণ লবন আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি উপাদান। আবার অতিরিক্ত পরিমাণে লবণ খেলেও শরীরে ক্ষতি হতে পারে। এইজন্য গর্ভবতী মায়েদের প্রতিদিন সঠিক নিয়ম অনুসরণ করে পরিমাপমতো প্রতিদিন লবণ খাওয়া উচিত।
মন্তব্যঃ কাঁচা লবণ খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
লবন আমাদের শরীরের জন্য কতটা আপনার ইতিমধ্যে জেনেছেন। তাছাড়া অতিরিক্ত পরিমাণে লবণ খেলে কি কি ক্ষতি হতে পারে। সেই সম্পর্কে আমরা এই আর্টিকেল বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করছি আর্টিকেলটি পড়ে আপনার উপ্রকৃত হবেন। প্রত্যেকদিন কতটুকু পরিমাণ খাওয়া উচিত। লবণ খাওয়ার কয়েকটি উপকারিতা এবং ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আটিকেলটি পড়ে যদি আপনার ভালো লাগে অবশ্যই আপনার বন্ধুদের শেয়ার করতে ভুলবেন না।
এমন নিত্য নতুন তথ্যমূলক আটিকেল পেতে আমাদের ওয়েবসাইটি নিয়মিত ভিজিট করতে পারেন। আপনার যদি কোনো মতামত থেকে থাকে অবশ্যই কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাবেন। আপনার মহামূল্যবান সময় নষ্ট করে, প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
ফকটেক ২৪ এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন
comment url