চুল পড়া বন্ধ করার উপায় ২০২৫ ঘরোয়া প্রতিকার ও ১৭টি টিপস

চুল পড়া বন্ধ করার উপায় ২০২৫ সম্পর্কে  জানতে অনেকেই গুগলে এসে সার্চ দেয়। প্রাকৃতিক উপায়ে এবং ঘরোয়া জিনিস দিয়ে চুল পড়া সমস্যার মোকাবেলা করা যায়। আজকের আর্টিকেলে মেয়েদের মাথার চুল পড়া বন্ধ এবং প্রাকৃতিক কার্যকরী টিপস নিয়ে আলোচনা করব।

চুল-পড়া-বন্ধ-করার-উপায়-ঘরোয়া-প্রতিকার

চুল পড়া সমস্যা প্রায় ৯৯% মানুষের প্রধান সমস্যা। অনেকেই জানেন না যে হাতের কাছের জিনিস দিয়েই চুল পড়া বন্ধ করা যায়। তাহলে চলুন আলোচনা করি রান্না ঘরে এমন কোন জিনিস আছে যেটি দিয়ে চুল পড়া, চুল কালো করা এবং চুল ঘন করা সম্ভব।

পোষ্ট সূচিপত্রঃ চুল পড়া বন্ধ করার উপায় ২০২৫

 চুল পড়া বন্ধ করার উপায় ২০২৫

মেয়েদের চুল পড়া একটি কমন সমস্যা। এখন চুল পড়তে আর বয়স লাগে না। শুনেছি ৪০ বছর পার হলে নাকি চুল পড়া শুরু হয়। কিন্তু এখন খাদ্য ভেজাল এবং বিভিন্ন কেমিক্যাল যুক্ত তেল বা শ্যাম্পু ব্যবহার করায় অকালে চুল ঝরে যাচ্ছে। আমরা অনেকেই জানিনা কেন চুল পড়ে যাচ্ছে বা কোন হরমোন দায়ী চুল পড়ার জন্য। চুল পড়ার অন্যতম কারণ হলো অতিরিক্ত শ্যাম্পু ব্যবহার, মানসিক টেনশন, পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ না করা, ভিটামিন কমে যাওয়া।

চুল পড়া বন্ধ করতে রান্নাঘরে রয়েছে প্রাকৃতিক উৎস। যা দিয়ে আপনি খুব সহজে চুল পড়া বন্ধ করতে পারবেন। হাতের নাগালে পাওয়া যায় সেইরকম জিনিস গুলো হল পেঁয়াজ, ডিম, কালিজিরা, মেথি যেসব দিয়ে আপনি সহজে ব্যবহার করে চুল পড়া বন্ধ করতে পারবেন। তাহলে চলুন চুল পড়া বন্ধ করার উপায় ২০২৫ সম্পর্কে আলোচনা করি।

চুল পড়া রোধে গরম তেলের ব্যবহার

গরম তেলে রয়েছে অনেক গুণ। সপ্তাহে অন্তত একবার হলেও মাথার তালুতে কুসুম গরম তেল মাখা প্রয়োজন। চুল পড়া রোধ করতে গরম তেল মাথার তালুতে ব্যবহার করা এক কার্যকরী টিপস। নারিকেলের তেল বা সরিষার তেল কুসুম গরম করে মাথার তালুতে মেসেজ করুন। এতে রক্ত সঞ্চালন হয় যা চুলের গোড়াকে মজবুত করে এবং চুল পড়া রোধ করে। নিয়মিত গরম তেল মাখলে মাথার খুশকি এবং এলার্জি দূর হয়।

চুলের ঘনত্ব অনুযায়ী একটি পাত্রে তেল নিন। অল্প আচে গরম করুন। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন অতিরিক্ত গরম হয়ে না যায়। অতিরিক্ত গরম তেল মাথায় দিলে চুল উঠে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কুসুম গরম থাকা অবস্থায় তেল মাথায় ম্যাসাজ করুন। গোসলের ২০ থেকে ৩০ মিনিট পূর্বে দিয়ে রাখুন এবং শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। তবে মনে রাখবেন গরম তেল মাথায় ব্যবহারের পূর্বে চুল পরিষ্কার থাকতে হবে।

আরো পড়ুনঃ চুলের যত্নে কালোকেশি পাতার ব্যবহার

চুল পড়া রোধে নারকেল তেলের ব্যবহার

চুলের প্রোটিন জগতে নারকেল তেল কার্যকরী উপাদান। চুলের খাদ্য হিসেবে ধরা হয় নারকেল তেলকে। নারকেল তেলের রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ফ্যাটি অ্যাসিড।  চুল সহজেই শোষণ করতে পারে নারিকেল তেল। ফ্যাটি এসিড চুলে আদ্রতা যোগায়, লরিক অ্যাসিড চুলের পুষ্টি যোগায় এবং চুল মজবুত করে। অ্যান্টিফাঙ্গাল বা ফাঙ্গাল ইনফেকশন মাথার খুশকি দূর করে।

আপনি গোসলের এক ঘন্টা আগে নারকেল তেল লাগিয়ে রাখতে পারেন। পরের শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। আবার আপনি নারকেল তেলের সাথে ভিটামিন ই যোগ করতে পারেন। নারকেল তেল এবং ভিটামিন ই সহযোগে ব্যবহার করলে চুল বৃদ্ধি হয়, চুল পড়া রোধ হয়, চুল শাইনিং করে এবং চুল মজবুত করে। এই মিশ্রণটি নিয়মিত ব্যবহারে ঘন লম্বা এবং স্বাস্থ্য উজ্জ্বল চুল পেতে পারেন।

চুল পড়া বন্ধ করতে পেঁয়াজ রসের ব্যবহার

চুল পড়া বন্ধ করতে এবং নতুন চুল গজাতে পেঁয়াজের রস অতুলনীয়। পেঁয়াজের রসে রয়েছে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড যা অকালে চুল পেকে যাওয়া রোধ করে। এছাড়াও পেঁয়াজের রসে রয়েছে অ্যামাইনো এসিড, সালফা্‌র, ভিটামিন বি১, ভিটামিন বি২, অক্সালিক অ্যাসিড, অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল যা চুল পড়া রোধ করে এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। চুলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো কেরাটিন। আর এই কেরাটিন থাকে পেঁয়াজের রসে।

পেঁয়াজের রসে থাকা অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল বা অ্যান্টিফাঙ্গাল খুশকি দূর করে। তাছাড়া পেঁয়াজের রসে থাকা  অ্যালসিন বা সালফার মাথার ত্বকের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে। রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক থাকলে মাথার চুলের গোড়ায় পুষ্টি সরবরাহ ভালো হয় যা চুল পড়া দূর করে।

তবে খেয়াল রাখতে হবে অতিরিক্ত পেঁয়াজ রস ব্যবহারে মাথার ত্বকের চুলকানি বা এলার্জি সমস্যা দেখা দিতে পারে।প্রতি সপ্তাহে দুইবার পেঁয়াজের রস মাথায় লাগাতে পারেন নির্দিষ্ট পরিমাণে। এতে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। পেঁয়াজের রস ব্যবহার করবেন গোসলের ৩০ থেকে ৪০ মিনিট পূর্বে।

চুল পড়া বন্ধ করতে ডিমের ব্যবহার 

শরীরে প্রোটিন পেতে যেমন ডিম খাওয়া প্রয়োজন ঠিক তেমনি চুলের প্রোটিন আনতে ডিম ব্যবহার করতে হয়। ডিম শুধু শরীরের খেয়াল রাখে না, চুলেরও খেয়াল রাখে। চুলকে সুন্দর এবং স্বাস্থ্য উজ্জ্বল করতে ডিম অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। ডিমে রয়েছে প্রোটিন এবং মিনারেল। এছাড়াও রয়েছে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স। ভিটামিন বি কমপ্লেক্স চুলের সৌন্দর্য বাড়াতে সাহায্য করে। ডিমে থাকা বায়োটিন চুলের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে কয়েকগুণ।

চুলকে সুন্দর চুলকে সুন্দর এবং স্বাস্থ্যজ্জ্বল করতে চুলের ঘনত্ব অনুযায়ী একটি পাত্রে ডিম ভেঙে নিন। ডিম গুলো ভালোভাবে ফেটিয়ে নিন, ডিমের কুসুম এবং সাদা অংশ একসাথে ফেটাতে হবে। ফেটানো ডিমের সাথে আপনি অলিভ অয়েল, মধু, কলা যোগ করতে পারেন। গোসলের ৩০ থেকে ৪০ মিনিট পূর্বে এই মাক্সটি ব্যবহার করুন। ভালো ফলাফল পেতে সপ্তাহে অন্তত দুইবার ডিমের মাক্সটি ব্যবহার করুন।

চুল পড়া রোধ করতে মেথির ব্যবহার

মেথিতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন ও নিকোটিনিক এসিড আছে যা চুলের ভেতর থেকে পুষ্টি যোগায় এবং চুলকে সুন্দরও মজবুত করে। মেথি ভেজানো পানি যেমন পেটের সমস্যা দূর করে ঠিক তেমনি চুলের সমস্যাও দূর করে। মেথি ভেজানো পানি চুলের গোড়ায় ১০ থেকে ১৫ মিনিট ম্যাসাজ করলে চুলের গোড়া মজবুত করে। ৩০-৪০ মিনিট মাথায় রেখে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। তাছাড়া আপনি সারারাত রেখে সকালে চুল ধুতে পারে।

মেথিতে রয়েছে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল এবং এন্টিফাঙ্গাল যা খুশকি দূর করতে সাহায্য করে।ভেজানো মেথি পাটায় বা ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে মাথায় লাগাতে পারেন। গোসলের কমপক্ষে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট পর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহের একবার ব্যবহার করুন। এছাড়াও মেথি চুলের অকালপক্কতা দূর করে। নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে এবং মেথি চুলের কন্ডিশনিং হিসেবে কাজ করে।

চুল পড়া বন্ধ করতে মেহেদি পাতার ব্যবহার

চুলের যত্নে মেহেদি পাতার কোন তুলনা হয় না। চুলকে রিপেয়ার করে মেহেদী পাতা। এছাড়াও চুলের গোড়া মজবুত করে, চুলের রুক্ষতা দূর করে, নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে, চুলকে ঘন এবং স্বাস্থ্য উজ্জ্বল করে, কালো চুলকে আরো কালো করে, সাদা চুলের রং পরিবর্তন করে, চুলের খুশকি দূর করে। তাহলে চলুন এর ব্যবহার বিধি জানা যাক-সতেজ মেহেদি পাতা পাটায় বেটে অথবা ব্লেন্ডারে পেস্ট করে অলিভ অয়েল বা সরিষার তেল মিশিয়ে চুলে ব্যবহার করুন। 

আবার মেহেদি পাতার পেস্ট অথবা গুঁড়ো পানি দিয়ে মিশিয়ে সাথে লেবুর রস দিয়ে মাথায় ব্যবহার করতে পারেন। এতে চুলের যাবতীয় সমস্যা দূর হবে। এইগুলো একসাথে পেস্ট করে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট ঢাকা দিয়ে রেখে দিতে হবে। গোসলের ১ এক থেকে ১ঃ৩০ ঘন্টা পূর্বে মিশ্রণটি মাথায় লাগাতে হবে। তবে মেহেদি পাতার পেস্ট লাগানোর আগের দিন মাথায় তেল দেওয়া ভালো। আবার মেহেদি পাতার পেস্ট লাগানোর পরের দিন মাথায় তেল দিলে কন্ডিশনারের কাজ করে।

চুল পড়া রোধে এলোভেরার ব্যবহার

চুল পড়া রোধে অ্যালোভেরার জুরি মেলা ভার। অ্যালোভেরার শরবত যেমন শরীরকে ঠান্ডা রাখে ঠিক তেমনি মাথাও ঠান্ডা রাখতে এলোভেরা কার্যকরী। চুলের সমস্যার জন্য এলোভেরা হল প্রাকৃতিক আশীর্বাদ। এলোভেরাতে রয়েছে ভিটামিন, খনিজ ও এনজাইম যা চুলের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করে। এছাড়াও এলোভেরাতে রয়েছে ভিটামিন ই , ভিটামিন এ, এবং ভিটামিন সি। অ্যালোভেরার জেল সরাসরি চুলে ব্যবহার করা যায়। চুলকে শক্ত মজবুত এবং মসৃণ করতে সাহায্য করে।

আরো পড়ুনঃ টয়লেটে বসে সিগারেট খেলে কি হয় জানুন ক্ষতিকর দিক 

আপনি বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করতে পারেন। যেমন অ্যালোভেরা ও মধু, এলোভেরা ও নারকেল তেল। রেমিডিটি বানানোর জন্য আপনি এলোভেরা জেল অথবা অ্যালোভেরার পাতা নিয়ে চামচ দিয়ে জেল গুলো উঠিয়ে নিয়ে মধু অথবা নারকেল তেল ভালোভাবে মিশিয়ে চুলে এপ্লাই করুন। গোসলের পূর্বে এক ঘন্টা বা দুই ঘন্টা অপেক্ষা করুন। তারপর শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার ব্যবহার করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। 

চুল পড়া বন্ধ করতে জবা ফুল ও পাতার ব্যবহার

জবা গাছের ফুল ও পাতা চুলে ব্যবহার করলে চুল হবে সুন্দর এবং ঝলমলে। চুল পড়া বন্ধ করতে এবং টাক টাক পড়া রোধ করতে জবার ফুল ও পাতা ব্যবহার করা হয়। জবা ফুলে আছে ভিটামিন সি ফসফরাস, রাইবোফ্লোভিন, অ্যামাইনো অ্যাসিড, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর মত মূল্যবান উপাদান যা চুলের গোড়া কি শক্ত করে এবং চুলকে করে তোলে প্রাণবন্ত। চুলগুলো লম্বা এবং সুন্দর করতে জবার পাতা গুরুত্বপূর্ণ।

২০০৩ সালের গবেষণা দেখা গেছে চুল লম্বা করতে পারে জবা ফুলের নির্যাস। আরেকটা গবেষণায় দেখা গেছে জবার ফুল ও পাতায় এন্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা চুলের গোড়া শক্ত করতে, চুল ঘন করতে এবং চুলের ভলিউম বাড়াতে পারে। চুলকে সুন্দর এবং খুশকি মুক্ত করে জবার ফুল ও পাতা। জবা ফুলের বা পাতার প্যাক বানিয়ে বা তেল বানিয়ে মাথার তালুতে মেসেজ করলে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়, যা চুলের গোঁড়া মজবুত করে।

জবার তেল বানানোর জন্য গাছ থেকে সবুজ সতেজ জবার ফুল ও পাতা সংগ্রহ করে বেটে নিন। এক কাপ সমপরিমাণ নারকেল তেল ও জবার পেস্ট নিয়ে দুই থেকে তিন মিনিট অল্প আছে জাল করুন। এবং উপাদানটি ঠান্ডা করতে দিন হয়ে গেল আপনার জবার তেল। ভালো ফলাফল পেতে সপ্তাহে দুইবার ব্যবহার করুন। মনে রাখবেন গোসলের ৩০ থেকে ৪০ মিনিট পূর্বে ব্যবহার করুন এবং পরবর্তীতে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। 

চুল পড়া রোধ করার জন্য আমলকির ব্যবহার

চুল পড়া রোধে আমলকির ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বহুগুণ সমৃদ্ধ আমলকি ত্বক এবং চুলের সৌন্দর্যের জন্য ব্যবহার করা হয় প্রাচীনকাল থেকে। আমলকিতে থাকা পলিফেনোলস নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় মরণব্যাধি ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করে। আমলকিতে রয়েছে ভিটামিন ও মিনারেল এবং ফাইটো নিউট্রিয়েন্ট এর মত জরুরী পুষ্টিগুণ উপাদান। এইসব পুষ্টিগুণ উপাদান চুলের জন্য বেশ উপকারী।

আমলকির রসের চুলের ফলিক গুলো শক্তিশালী করে চুলকে মজবুত করে তোলে। দ্রুত চুলকে বড় করে। আমলকি চুলের টেনিন হিসেবে কাজ কর। আমলকিতে থাকা অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল এবং এন্টি ফাংগাল থাকায় মাথার ত্বক পরিষ্কার রাখে, পুষ্টি যোগায় এবং খুশকি মুক্ত রাখে।

বাজারে আমলকি দুই ধরনের পাওয়া যায়। কাঁচা আমলকি এবং আমলকির পাউডার। আপনি চুলের মাক্স হিসেবে আমলকির পাউডার সাথে এক চামচ মধু এবং দুই চামচ টক দই মিশিয়ে মাথায় ব্যবহার করতে পারেন। আধাঘন্টা অপেক্ষা করার পর শ্যাম্পু করে নিন। অথবা আপনি আমলকি তেল বানিয়ে মাথায় মেসেজ করতে পারেন। আমলকিতে থাকা ৮২% কন্ডিশনিং যা চুলকে রুক্ষ এবং শুষ্কতার হাত থেকে রক্ষা করে।

আমলকি তেল বানাতে আমলকি গুলো কেটে শুকিয়ে নিতে হবে। একটি পাত্রে পরিমাণ মতো তেল ঢালুন এবং শুকনো আমলকি গুলো দিয়ে ভালোভাবে গরম করুন যতক্ষণ না তেলের কালার পরিবর্তন হয়। ঠান্ডা করুন এবং সংরক্ষণ করুন। সপ্তাহে দুই থেকে তিন বার মাথার তালুতে মেসেজ করুন গোসলের পূর্বে।

চুল পড়া বন্ধ করতে কালোজিরা তেলের ব্যবহার

চুলের যত্নে কালোজিরা তেল একটি প্রাকৃতিক উপাদান। চুলের গ্রোথ বৃদ্ধি করতে, নতুন চুল গজাতে, চুলকে সুন্দর এবং স্বাস্থ্যজ্জল করতে কালোজিরা তেলের ব্যবহার অপরিহার্য। কালোজিরার তেলে রয়েছে ভিটামিন, খনিজ, মিনারেল এবং ফ্যাটি এসিড এর মত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান পাওয়া যায়। কালোজিরা তেলের সাথে আপনি আরো উপাদান মিশাতে পারেন যেমন মধু, ক্যাস্টর অয়েল এবং নারকেল তেল।চুলের প্রয়োজনীয় প্রোটিন যোগান দেয় এই মিশ্রণটি।

চুলের ঘনত্ব অনুযায়ী একটি পাত্রে  ১ বা ২ চামচ কালোজিরা তেল এবং  ১ বা ২ পেঁয়াজের রস মিশিয়ে গরম করে নিন। মিশ্রণটি ঠান্ডা হয়ে এলে মাথার ত্বকে ১০-১৫ মিনিট মেসেজ করুন। ৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন এবং শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। আবার সমপরিমাণ কালোজিরা তেল ও ক্যাস্টর অয়েল একসাথে মিশিয়ে হালকা কুসুম গরম করে মাথার ত্বকে মেসেজ করুন। ৩০ মিনিট অপেক্ষা করে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। 

আপনি কালোজিরা তেল এবং লেবু রস মিশিয়ে মাথার চুলে দিতে পারেন। আধা ঘন্টা অপেক্ষা করে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। শুকনো কালোজিরা নিয়ে হালকা করে ভেজে নিয়ে গুড়া করে নিতে হবে এবং মেহেদীর গুড়া সাথে মিশিয়ে পুরো চুলে এপ্লাই করতে হবে। প্যাক টি ব্যবহার করে এক ঘন্টা অপেক্ষা করুন। শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এতে নতুন চুল গজাবে এবং অকালপক্কতা দূর করবে।

চুল পড়া রোধ করতে লবঙ্গের ব্যবহার

চুলের পর্যাপ্ত পরিমাণ পুষ্টি যোগায় লবঙ্গের পানি। লবঙ্গের পানিতে রয়েছে ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট যা চুলের গোড়া শক্ত করে এবং চুল বৃদ্ধি করে। মাথার ত্বকে বা স্ক্যাল্পে ফাংগাল ইনফেকশন ও খুশকির সমস্যা দূর করে। লবঙ্গের পানি নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। তাহলে চলুন লবঙ্গের পানি তৈরি করা শিখি-একটি পাত্রে পরিমাণ মতো পানি ফুটিয়ে নিন। ফোটানোর সময় ৭-৮ টি লবঙ্গ দিয়ে দিন। কিছু সময় ফুটিয়ে নিন। পানি কি ঠান্ডা হয়ে এলে বায়ু রোধী কাঁচের পাত্রে সংরক্ষণ করুন।

আরো পড়ুনঃ অ্যালোভেরা চাষের জন্য মাটির বৈশিষ্ট্য সেরা ১০টি কোশল

ব্যবহারের পূর্বে ৩-৪ চামচ লবঙ্গের পানি এবং সামান্য লেবুর রস মিশিয়ে মাথায় মেসেজ করুন। ১০-১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। তবে মিশ্রণটি মাথায় দেওয়ার আগে মাথা পরিষ্কার করা জরুরী। এছাড়াও আপনি শুধু লবঙ্গের পানি মাথায় ব্যবহার করতে পারবেন। এতে আপনাকে প্রথমে শ্যাম্পু করে নিতে হবে, তারপর কন্ডিশনার ব্যবহার করতে হবে এরপর লবঙ্গের পানি মাথায় 10 মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। তারপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। সপ্তাহে ২ থেকে ৩ বার ব্যবহার করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। 

চুল পড়া বন্ধ করতে চা পাতার ব্যবহার

চা খাওয়ার পাশাপাশি চুলে ও ব্যবহার করা যায়। এক কাপ চা যেমন ক্লান্তি দূর করতে পারে ঠিক তেমনি চুলের ও ড্যামেজ রিপেয়ার করতে পারে। চা পাতায় রয়েছে ভিটামিন সি, ভিটামিন ই এবং প্যানথিল। যা চুলের গোড়াকে শক্ত করে, চুল পড়া রোধ করে, চুলকে শাইনিং করে। যাদের চুলের আগা ভেঙে যায় এবং চুলের উজ্জ্বলতা নষ্ট হয়ে যায় তারা চা পাতা ব্যবহার করতে পারেন।

লেবুর রস দিয়ে চা পাতার পানি কন্ডিশনার বানিয়ে চুলে লাগাতে পারেন। একটি পাত্রে পানি নিয়ে তার ভিতরে চাপাতা দিয়ে ফুটিয়ে নিন। পানিটি ঠান্ডা হয়ে এলে লেবুর রস দিয়ে মাথায় মেসেজ করুন। ১০ মিনিট অপেক্ষা করুন এবং ধুয়ে ফেলুন। তাছাড়া আপনি চা পাতা ফুটিয়ে পানি একটি বায়ু রোধী কাঁচের বোতলে সংরক্ষণ করুন। এবং প্রতিদিন শোবার আগে চুলে এপ্লাই করুন। প্রতিদিন এই কাজ করলে চুলের বৃদ্ধি হবে এবং চুল পড়া কমবে।

চুল পড়া রোধে ঢেঁড়সের ব্যবহার

প্রাকৃতিক কন্ডিশনার হিসেবে ঢেড়সের ব্যবহার অতুলনীয়। সবাই চাই চুলকে সুন্দর এবং উজ্জ্বল দেখতে। কিন্তু কেমিক্যালযুক্ত চুলের বিভিন্ন প্রোডাক্ট ব্যবহার করে চুলের আসল সৌন্দর্য হারিয়ে যায়। অনেকেই চুলকে সুন্দর দেখানোর জন্য পার্লারে গিয়ে স্টেট করে, চুলকে স্মুথিং করাই। এতে তাৎক্ষণিক চুল ভালো দেখালেও পরবর্তীতে চুল ড্যামেজ হয়ে যায়। কিন্তু ঘরের কোণে পড়ে থাকা সবজি দিয়ে চুল স্টেট এবং স্মুথিং করা সম্ভব।

ঢেঁড়সের কন্ডিশনার বানানো খুব সোজা। ১০-১২ টা ঢেঁড়স মাঝারি আকারে কেটে নিতে হবে। ফুটন্ত পানিতে কাটা ঢেঁড়স গুলো দিতে হবে এবং অল্প আচে জাল দিতে হবে। ঢেঁড়সের পিচ্ছিল পদার্থটা বেরিয়ে না আসে ততক্ষণ জল দিতে হবে। তারপর ঠান্ডা করুন। পানিটির সাথে লেবুর রস মিশালে ভালো না দিলেও ভালো। শ্যাম্পু করার পর পানি দিয়ে চুলের আগা থেকে শুরু করে গোড়া পর্যন্ত এপ্লাই করুন। দেখবেন কন্ডিশনারের কাজ করছে।

চুল পড়া বন্ধ করতে নিম পাতার ব্যবহার

চুলের যত্নে নিমপাতা একটি কার্যকরী উপাদান। নিম গাছ হল একটি মহা ঔষধি গাছ। মনীষীরা বলেন একটি নিম গাছ বাড়িতে থাকলে একটি ডাক্তার বাড়িতে আছে। নিম গাছের পাতা, বাকল, ফল ওষুধের গুনে গুণাম্বিত। নিমের ডাল দিয়ে দাঁত মাজলে দাঁত পরিষ্কার হয়। পেটের হজমের সমস্যা হলে নিমের ছাল ভিজিয়ে খেলে পেট পরিষ্কার হয়। কচি কচি পাতা ভেজে খাওয়া যায়। ঠিক তেমনি চুল পড়া বন্ধ করতে নিম পাতা ব্যবহার করা হয়।

কচি কচি নিমপাতা তুলে পানির সাথে ১০-১৫ মিনিট সিদ্ধ করে নিন। পানিটি ঠান্ডা হলে ছেকে নিন। মাথায় শ্যাম্পু করা পর শেষ ধোঁয়া দিন এই পানি  দিয়ে। তাছাড়া আপনি নিমপাতা পেটে পেস্ট বানিয়ে মাথার চুলে লাগাতে পারেন। সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার ব্যবহার করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। এই উপাদানটি ব্যবহারে চুলের খুশকি দূর হবে, চুল পড়া রোধ হবে এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করবে।

চুল পড়া রোধে কারি পাতার ব্যবহার

প্রোটিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল সমৃদ্ধ কারিপাতা চুলের সমস্যা দূর করে। প্রোটিন নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। এন্টিব্যাকটেরিয়াল বা অ্যান্টিফাঙ্গাল মাথার খুশকি দূর করে চুলকে রাখে সুন্দর এবং ঝলমলে। চুলকে মজবুত করে কারি পাতা। কারি পাতার সাথে বিভিন্ন উপাদান মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারবেন।

কারি পাতা দিয়ে লেবুর রস মিশিয়ে মাথার দিতে পারেন। টক দই দিয়ে কারি পাতা, নারকেল তেল এবং কারি পাতা, মেহেদির পাতা ও কারি পাতা, পেঁয়াজের রস ও কারি পাতা একসাথে পেস্ট করে গোসলের পূর্বে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন চুলে নতুন জীবন ফিরে এসেছে।

লেখকের মন্তব্যঃ চুল পড়া বন্ধ করার উপায় ২০২৫

চুল পড়া বন্ধ করা সম্ভব যদি ধৈর্য সহকারে নিয়মিত প্রাকৃতিক যত্ন স্বাস্থ্যকর খাবার এবং সঠিক তেল ব্যবহারে চুল পড়া বন্ধ করা সম্ভব। প্রাকৃতিকভাবে চুলের যত্ন নিলে তাড়াহুড়ো না করে তিন-চার মাস অপেক্ষা করতে হবে। কারণ কেমিক্যাল যুক্ত প্রোডাক্ট যত তাড়াতাড়ি কাজ করে, প্রকৃতিতে পাওয়া জিনিস অত তাড়াতাড়ি কাজ করে না। তাই ধৈর্যের সাথে ব্যবহার করতে হবে।

প্রিয় পাঠক, আজকের আর্টিকেলটি পড়ে চুল পড়া বন্ধ করার উপায় ২০২৫ সম্পর্কে কিছু না কিছু জেনেছেন। তাই কেমিক্যাল যুক্ত প্রোডাক্ট পরিহার করুন এবং প্রকৃতিতে পাওয়া জিনিস দিয়ে চুলের যত্ন নিন। পোষ্টটি পড়ে ভালো লাগলে কমেন্ট করবেন। ধৈর্য সহকারে পোস্টটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ফকটেক ২৪ এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন

comment url