কচু শাকের পুষ্টিগুন, উপকারিতা ও অপকারিতা-গর্ভাবস্থায় কচু শাক খাওয়ার উপকারিতা
কচু শাকের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আমরা অনেকেই অবগত নই। আজকে এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনাদের সাথে আলোচনা করব কচু শাকের পুষ্টিগুণ উপকারিতা ও অপকারিতা এবং গর্ভাবস্থায় কচু শাক খাওয়ার উপকারিতা।
কচু শাক আমাদের সবার পরিচিত একটি সবজি। সবাই কচু শাক চিনি এবং কচু শাক রান্না করে
খায় কিন্তু এর পুষ্টিগুণ সম্পর্কে আমরা জানিনা। তাই আজকে এই পোষ্টের মাধ্যমে কচু
শাকের বিভিন্ন পুষ্টিগুণ এবং কচু শাক খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে
বিস্তারিত তুলে ধরার চেষ্টা করব।
পোস্ট সূচীপত্রঃ কচু শাকের পুষ্টিগুন, উপকারিতা ও অপকারিতা
- কচু শাকের পুষ্টিগুন, উপকারিতা ও অপকারিতা
- গর্ভাবস্থায় কচু শাক খাওয়ার উপকারিতা
- কচুর লতি খাওয়ার উপকারিতা
- কচু শাকের পুষ্টিগুন উপাদান
- কচু শাকে কি ভিটামিন আছে
- কচু শাক খেলে কি এলার্জি হয়
- কচু শাকে খেলে কি গ্যাস হয়
- ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায় কচুশাক
- কচুর শাক খেলে কি ওজন কমে
- কচু শাকের অপকারিতা
- শেষ কথাঃ কচু শাকের পুষ্টিগুন, উপকারিতা ও অপকারিতা
কচু শাকের পুষ্টিগুন, উপকারিতা ও অপকারিতা
কচু শাক একটি অবহেলিত কিন্তু অনেকের পছন্দের সবজি। অবহেলিত কারণ আমাদের বাড়ির
চারপাশে যেমন পচা ডোবায়, নর্দোমায়, পুকুরের আশেপাশে কচু শাক জন্মে। অনেকেই আবার
ব্যবসার উদ্দেশ্যে কচু শাক চাষ করে থাকে। কচু শাক চাষ করলেও গ্রামাঞ্চলে শাক
বিক্রি না করে কচু শাকের তলায় যে কচুমুখী হয় সেটা বাণিজ্যিকভাবে
বিক্রি হয়। গ্রাম অঞ্চলে কচু শাকের তেমন কদর না দিলেও শহরের দিকে কচুশাকের
ব্যাপক চাহিদা।
কচু শাকে বিভিন্ন পুষ্টিগুণ এবং উপকারিতায় ভরপুর। কচুশাকে রয়েছে ভিটামিন এ, বি,
সি, আয়রন, কপার, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম আরো অজানা অনেক
পুষ্টিগুণ রয়েছে কচুশাকে। কচু শাক আমরা বিভিন্নভাবে রান্না করে খেতে পারি। কচু
শাক ইলিশ মাছ, চিংড়ি মাছ, মসুরের ডাল এবং নিরামিষ ভালো রান্না করে
থাকি। কচু শাক যেভাবেই রান্না করা হোক না কেন এর পুষ্টিগুণ মান থাকবে
অটুট।
কচুশাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন থাকায় বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধ করে। কচুশাকে
রয়েছে আয়রন যা আমাদের হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি করে। ভিটামিন এ রাতকানা
রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করে। যাদের অ্যানিমিয়ার সমস্যা রয়েছে তারা কচু শাক
খেলে শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বৃদ্ধি পাবে। কচু শাক খারাপ কোলেস্টেরল কমিয়ে
হৃদরোগ আক্রান্তের ঝুকি কমায়। সর্বোপরি বলা যায় কচু শাক খেলে সব শাকের
ভিটামিন এই একসাথে পাওয়া যাবে।
গর্ভাবস্থায় কচু শাক খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় কচুর শাক খাওয়ার উপকারিতা রয়েছে অনেক।গর্ভাবস্থায় মায়ের শরীরের পুষ্টি চাহিদা অনেক বেড়ে যায়। আয়রন,ক্যালসিয়াম, ভিটামিন এ, সি এসব পুষ্টি অন্যতম উপাদান মা ও শিশু সুস্থ বিকাশের জন্য অপরিহার্য। আর এখানেই কচু শাক এক দারুন সমাধান হিসেবে হতে পারে। তাহলে চলুন গর্ভাবস্থায় কচু শাক খাওয়ার উপকারিতা আলোচনা করি-
গর্ভাবস্থায় রক্তস্বল্পতা কমন সমস্যা। বাংলাদেশের প্রায় গর্ভবতী মায়েদের রক্তস্বল্পতার কারণে জটিল সমস্যা দেখা দেয়। এই সমস্যার মোকাবেলা করতে হলে গর্ভবতী মায়েদের জন্য আয়রন জাতীয় খাদ্য তালিকা করতে হবে। দামে সস্তা এবং সহজলভ্য আয়রনের ভরপুর হলো কচু শাক। গর্ভাবস্থায় কচু শাক খেলে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়িয়ে রক্তস্বল্পতা দূর করে। আর কচুশাকে থাকা ভিটামিন সি আয়রন শোষণের সাহায্য করে যা কচু শাক আরো কার্যকরী করে তোলে।
কচু শাকে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকে। ক্যালসিয়াম আমাদের দাঁত ও
হাড়ের জন্য খুব উপকারী। এটি শিশু আর ও দাঁতের সঠিক গঠনের জন্য সহায়তা করে।
গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মায়েদের ক্যালসিয়ামের চাহিদা অনেক থাকে। কচুশাকে থাকা
ক্যালসিয়াম গর্ভবতী মায়েদের ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ করে। তাই গর্ভবতী
মায়েদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবারের মধ্যে কচু
শাক রাখা উচিত।
কচু শাকের প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ পাওয়া যায়। ভিটামিন এ চোখের জন্য খুব
গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে ভিটামিন এ গুরুত্বপূর্ণ।
ভিটামিন এ আপনার দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে সাহায্য করে এবং রাতকানা রোগ হওয়া থেকে
রক্ষা করে। গর্ভ অবস্থায় গর্ভের সন্তানের জন্য ভিটামিন এ বাচ্চার চোখের সঠিক
বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
আরো পড়ুনঃসকালে খালি পেটে মধু ও কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম
কচু শাক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। গর্ভাবস্থায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কিছুটা
হলেও দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে , গর্ভবতী মায়ের রোগ সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে। কচুতে
থাকা ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং বিভিন্ন রোগের সংক্রমণের হাত
থেকে রক্ষা করে।
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে কচু শাক। কচুশাকে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকায় গর্ভাবস্থায় উচ্চ উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপ প্রি একলামশিয়ার হাত থেকে রক্ষা করে।প্রি একলামশিয়া হল গর্ভাবস্থায় সময়ের আগে গর্ভের বাচ্চা নষ্ট হয়ে যাওয়া। এই জটিল সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম খাওয়া উচিত গর্ভ অবস্থায়। তাই গর্ভবতীর খাদ্য তালিকায় কচু শাক তালিকাভুক্ত করা উচিত ।
কচু শাক খাদ্য হজমের সহায়তা করে। গর্ভবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য একটি সাধারণ সমস্যা।
কচু শাককে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে, যা খাদ্য হজমের সহায়তা করে। প্রতিদিন
মলত্যাগ করার প্রবণতা বাড়িয়ে দেয়। ফলে। ফলে কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা দূর
হয়।
শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য ফলিক এসিড দরকার পড়ে। আর এই ফলিক এসিড পাওয়া
যায় কচু শাকের। শিশুর মস্তিষ্কের সঠিক বিকাশ এবং নিউরাল টিউব ডিফেক্ট প্রতিরোধ
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভাবস্থায় প্রথম দিকে এর অভাবে শিশুর জন্ম গ্রহনযোগ্য
ত্রুটি দেখা দিতে পারে। তাই পর্যাপ্ত ফলিক এসিড গ্রহণ করা উচিত।
কচুর লতি খাওয়ার উপকারিতা
- কচুর শাকের যেমন অনেক পুষ্টি গুনাগুন এবং এর উপকারিতা রয়েছে তেমনি করে কচুর লতিরা অনেক উপকারিতা রয়েছে। এটিও অনেক গুষ্টি গুনাগুনের সমৃদ্ধ একটি সবজি। এটি অনেকে অনেক ভাবে রান্না করে খান । এটিও অনেকে চিংড়ি মাছের সাথে রান্না করে খেয়ে থাকেন আবার কেউ কেউ শুটকি মাছের সাথে রান্না করে খেয়ে থাকেন। তবে যেভাবে খেয়ে থাকেন না কেন এর উপকারিতা অনেক। তাই এটি নিয়মিত খেলে এর থেকে অনেক উপকার পাবেন। তাই চলুন জেনে নেয়া যাক এর উপকারিতা সমূহ:
- কচুর লতিতে খাদ্য আশ রয়েছে যা হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে থাকে ফলে সহজেই শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ বের করে দিতে সাহায্য করে ।
- প্রচুর লতিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম আয়রন থাকে যা শরীরের হার ও দাঁত গঠনে সাহায্য করে থাকেন তাই আমাদের নিয়মিত কচুর রুটি খাওয়া উচিত ।
- যারা দীর্ঘদিন ধরে কোষ্ঠকাঠিন্যর রোগে ভুগছেন তারা নিয়মিত প্রচুর লতি খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ থেকে মুক্তি পাবেন। কেননা কচুর লতি হজমের সাহায্য করে মল ত্যাগে সহায়তা করে থাকে।
- শরীরের পানি শূন্যতা পূরণে কচুর লতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন কেননা কচুর লতিতে প্রচুর পরিমাণে পানি থাকে। তাই গরম করে শরীর থেকে পানি বের হয়ে গেলে প্রচুর পানি চাহিদা পূরণ করতে সাহায্য করে।
- কচুর লতির রোগ ও প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। তুলনা করছো লতিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে।
- কচুর লতি ও দেহের ওজন কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । যারা শরীরে ওজন কমাতে চান তারা নিয়মিত কচুর লতি খেতে পারেন এতে শরীরের ওজন কমানো সম্ভব।
- কচুর লতিতে রয়েছে ভিটামিন এ ভিটামিন বি বিটামিন সি ও পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়োডিন যা মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এবং চুল ও ত্বক ভালো রাখতে সাহায্য করে ।
- কচুর লতি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে শরীরকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। কচুর লতিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে যার কারণে এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে থাকে।
- কোষ্ঠকাঠিন্য বের করতে কচুর লতির ভূমিকা অপরিসীম। কচুর লতি হজম শক্তি উন্নীত করে মলত্যাগে সাহায্য করে থাকে হলে যাদের কষ্ট কাঠিন্য রোগ রয়েছে তারা প্রচুর লতি খেলে পোষ্ঠ কাঠিন্য রোগ সহজে দূর করতে পারবেন।
- কচুর লতি শরীরের আয়রনের ঘাটতি পূরণ করে থাকে কেননা কচুশাকে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে। তাই বিশ্বাস করে গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে প্রচুর লতি অনেক উপকারী এবং তারা খেলে এর থেকে অনেক উপকার পাবেন।
- কচুর লতিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ রয়েছে যার কারণে কচুর লতি খেলে চোখের অনেক সমস্যা এমনকি ভিটামিন এ জনিত বিভিন্ন সমস্যা সহজে দূর করা যায়। তাই নিয়মিত কচু শাক খেলে এর উপকার পাবেন
- প্রচুর লতি ক্যান্সার রোগ প্রতিরোধ করতেন সাহায্য করে থাকে। কচুর লতি রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করেন। ফলে শরীরে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে যার কারণে শরীরে ক্যান্সার কোষ বৃদ্ধি পায় না। হলে ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণে থাকতে সাহায্য করে।
- কচুর লতি হজম শক্তিতে সহায়তা করে থাকে। কচুর এ লতিতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে যা হজম শক্তি উন্নতি করে পাকস্থলী পরিষ্কার করে মাল তাকে সাহায্য করে থাকে।
- পুষ্টিবিজ্ঞানীদের মতে প্রচুর লতিতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে যা দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। কচুর লতি সাধারণত খেলোয়াড় বাড়ন্ত শিশুর ও কেমোথেরাপি নিচ্ছেন এমন রোগীদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান।
কচু শাকের পুষ্টিগুন উপাদান
কচু শাকে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিগুণ উপাদান রয়েছে। অন্যান্য সবজির তুলনায় কচু শাক সহজলভ্য এবং অনেক উপকারী একটি সবজি। গ্রামাঞ্চলে বাড়ির আশেপাশে পচা ডুবাই অবহেলিতভাবে কচু জন্মে। কিন্তু শহরে কচু শাক পাওয়া যায় না। কচুশাকে রয়েছে ভিটামিনের মধ্যে-ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, ভিটামিন সি, খনিজের মধ্যে-রয়েছে ক্যালসিয়াম, আয়রন, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাগানিজ এবং সালফার। আরো অন্যান্য রয়েছে ফাইবার, শর্করা, স্নেহ বা চর্বি, প্রোটিন।
কচুশাকে পুষ্টি উপাদান অনেক বেশি কচুশাকে পুষ্টি ও উপাদান গুলো হল প্রতি ১০০ গ্রাম সবুজ কচুশাকে থাকে- প্রোটিন ৩.৯ গ্রাম, লৌহ ১০ মিলিগ্রাম, শর্করা ৬.৮ গ্রাম, ভিটামিন বি ১ ০. ২২ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি টু ০.২৬ মিলি, ক্যালসিয়াম ২২৭ মিলিগ্রাম খাদ্য শক্তি ৫৬ কিলো ক্যালরি, ভিটামিন সি ১২ মিলিগ্রাম, স্নেহ বা চর্বি ১.৫ মিলিগ্রাম। কচু শাকে প্রচুর পুষ্টি উপাদান থাকায় এটি সব বয়সের মানুষের খেতে পারে।
প্রতি ১০০ গ্রাম কালো কচু শাকের থাকে-৮ এক গ্রাম শর্করা, ৬ দশমিক ৮ গ্রাম
প্রোটিন, ৩৮.৭ মিলিগ্রাম লৌহ, ০.০৬ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি১(থায়ামিন), ০. ৪৫
মিলিগ্রাম ভিটামিন বি২ (রাইবোফ্লোবিন), ৬৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি, ২ গ্রাম স্নেহ
বা চর্বি, ৪৬০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ৭৭ কিলোক্যালরি খাদ্যের শক্তি।
কচু থাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ খাদ্য শক্তি এবং ভিটামিন ভরপুর। সাধারণভাবে ব্যাখ্যা করতে গেলে প্রথমে বলতে হবে কচুর ডগা এবং কালো রঙের কচু শাকের আয়রন থাকে প্রচুর পরিমাণ যা পুষ্টিপরিপূর্ণ। সাধারণত রক্তশূন্যতায় ভোগা রোগীদের জন্য কচুর শাক খাওয়া আবশ্যক বললেই চলে। সাধারণত যাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা আছে বিশেষ করে তাদের প্রচুর পরিমাণ খেতে পারেন।
কচু শাকে কি ভিটামিন আছে
কচুশাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন রয়েছে। ভিটামিন গুলো হলো ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, ফাইবার, শর্করা ও আরো অন্যান্য ভিটামিন রয়েছে। প্রতিদিনের খাবার তালিকায় কচু শাক থাকলে পর্যাপ্ত পরিমাণ সব ভিটামিন শরীরে প্রবেশ করবে। তাই ছোট থেকে বড় সবারে সপ্তাহে অন্তত দুইবার কচু শাক খাওয়া উচিত। ডাক্তাররা সুস্থ থাকার জন্য বেশি বেশি শাক সবজি খাওয়ার নির্দেশনা দিয়ে থাকে। তাহলে চলুন কচু শাকের কি কি ভিটামিন আছে এবং কোন ভিটামিনের কি কাজ আলোচনা করি-
- ভিটামিন A (বিটা-ক্যারোটিন) চোখের দৃষ্টি ভালো রাখে, ত্বক এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
- ভিটামিন B1 (থায়ামিন) স্নায়ুতন্ত্র ওশক্তি উৎপাদনের সাহায্য করে
- ভিটামিন B2 (রাইবোফ্লোবিন) ত্বক, চুল ও চোখের জন্য উপকারী
- ভিটামিন B3 রক্ত সঞ্চালনীয় হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে
- ভিটামিন B6 মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায় এবং রক্তে হিমোগ্লোবিন তৈরিতে সহায়তা করে
- ভিটামিন C রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় ত্বক সুন্দর রাখে এবং ক্ষত দ্রুত সারায়
- ফোলেট (ভিটামিন B9) রক্ত তৈরিতে এবং গর্ভ অবস্থায় নারীর শিশু বিকাশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ
কচু শাক খেলে কি এলার্জি হয়
সাধারণ অর্থে কোন খাবারগুলোতে এলার্জি আছে তা আমরা নিশ্চিত করতে পারিনা। তবে
কিছু খাবারে মানবদেহে এলার্জি প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। তবে সব মানুষের
ক্ষেত্রে এলার্জির সৃষ্টি করে না কিন্তু কারো কারো ক্ষেত্রে এলার্জি সৃষ্টি
করে। এটি মানুষের শরীরের ওপর নির্ভর করে। এলার্জি সৃষ্টি করতে পারে এরকম সবজি
হল মিষ্টি কুমড়া, বেগুন, কচু শাক এবং পালং শাক।
কচুপাতায় অক্সালেট রয়েছে যা কিছু কিছু মানুষের গলা চুলকানো থেকে শুরু করে
এলার্জি দেখা দিতে পারে। অনেক সময় দেখা যায় অক্সালেট এর কারণে কিডনিতে পাথর
হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যায়। কচু কাঁচা পাতা খাওয়ার ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন
করতে হবে কারণ, কাঁচা পাতা খাওয়া বিষাক্ততা দেখা দেয়। কচুর কচি
পাতা পুরনো পাতার চেয়ে বেশি অক্সালের থাকে। তাই যাদের এলার্জি সমস্যা
রয়েছে তারা কচুপাতা খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
আরো পড়ুনঃ চুল পড়া বন্ধ করার উপায় ২০২৫ ঘরোয়া প্রতিকার ও ১৭টি টিপস
অনেক সময় দেখা যায় কচু পাতা কাঁচা অবস্থায় শরীরে স্পর্শ হলে সাথে সাথে
চুলকানো শুরু হয়। তাই কচুর আশেপাশে যাবেন না। কচু কাটার সময় হাতে গ্লাভস পড়ে
নিবেন। কচুর পাতায় অক্সালের দূর করার উপায় হচ্ছে আগের দিন কেটে রেখে সারারাত
পানিতে ভিজিয়ে রাখলে কচুর অক্সালেট কমে। তাছাড়া রান্না করার সময় টক জাতীয়
যেমন লেবুর রস বা লেবু, তেতুলের টক, টক আমড়া ব্যবহার করতে পারেন।
এতে খাওয়ার সময় গলা চুলকাবে না।
তবে প্রচুর সাথে কি পরিমান এলার্জি আছে তা বোঝার জন্য আপনাকে কচু শাক খেতে হবে। কচু শাক খাওয়ার পর যদি আপনার শরীরে কোন এলার্জির লক্ষণ প্রকাশ পায় তাহলে বুঝতে হবে কচুশাকে আপনার এলার্জি আছে। আর যদি কচু শাক খেয়ে আপনার শরীরে কোন এলার্জির লক্ষণ প্রকাশ না পায় তাহলে বুঝতে হবে আপনার কচুশাকে এলার্জি নেই । তাই এটি এক একজনের ক্ষেত্রে একেক রকম হয়ে থাকে। কারো শরীরে এলার্জি লক্ষণ প্রকাশ পায় আবার কারো পায় না
কচু শাকে খেলে কি গ্যাস হয়
কচু শাক খেলে কি গ্যাস হয়? এইরকম প্রশ্ন অনেকেই করে থাকেন। তাহলে চলুন কচু শাক
খেলে গ্যাস হয়, কি না হয় তা নিয়ে আলোচনা করব। কচু শাক পরিমাণের তুলনায় বেশি
খেলে গ্যাস হয়। কারণ কচুশাকে অক্সালেট নামক উপাদান থাকায়, গ্যাসের কারণ হতে
পারে। তাছাড়া পেটের ফোলা ভাব, বদহজম হতে পারে।
কচুশাকে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে। ফাইবার হল আশ জাতীয় পদার্থ। যা আমাদের
খাদ্য হজমে সাহায্য করে। কিন্তু ফাইবার বা আঁশ জাতীয় খাদ্য অতিরিক্ত
গ্রহণের ফলে গ্যাস, বদহজম , পেট ফোলা ভাব, অস্বস্তি হতে পারে। তাছাড়া অতিরিক্ত
কচু শাক খেলে ফাইবারগুলো কিডনিতে জমা হয়ে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই
অতিরিক্ত কিছু সব খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায় কচুশাক
ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায় কচু শাক এই কথাটি কতটুকু সত্য চলুন আলোচনা করি।
অনেকেই বলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায় কচু শাক। আসলেই কি তাই। হ্যাঁ, আসলে
ডায়াবেটিস এর জন্য কচু শাক অনেক উপকারী। কচুশাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে
ফাইবার, যা রক্তে শর্করার মাত্রা ধীরে ধীরে বাড়াতে সাহায্য করে এবং ইন্সুলিনের
কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
কচুশাকে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম থাকায় হঠাৎ রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে বা
কমে যায় না। তাই ডায়াবেটিসের কোন ঝুঁকি থাকে না। কচুশাকে ভিটামিন এ,
বি, সি ও ফ্ল্যাভোয়েড নামক অ্যান্টি এক্সিডেন্ট থাকায় কোষকে ক্ষতি থেকে রক্ষা
করে যা ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্ট কমায়।পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন এগুলো
শরীরে ইলেকট্রোলাইট ভারসাম্য বজায় রাখে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে, যা
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
কচুর শাক খেলে কি ওজন কমে
কচু শাক খেলে কি ওজন কমে এই বিষয়ে আপনারা অনেকেই জানতে চান। বিশেষ করে যারা ওজন কমাতে চান তারা এই বিষয়টিকে বেশি সার্চ করে থাকেন। কচু শাক খেলে ওজন কমে যায়। কারণ কচু শাকের মধ্যে আছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার আর অল্প পরিমান আছে ক্যালরি। প্রতি ১০০ গ্রাম কচু শাকে ক্যালোরি খুবই কম প্রায় ২৫ থেকে ৩০ ক্যালোরি। এটি ওজন নিয়ন্ত্রণের সহায়ক। যার ফলে আপনি যদি নিয়মিত কচু খান তাহলে অল্পতেই আপনার পেট ভরে যাবে। অর্থাৎ অন্যান্য খাবার খেতে আপনাকে ইচ্ছা করবে না।
কচুশাকে প্রচুর পরিমাণে খাদ্য আঁশ বা ফাইবার আছে যা পেট ভরে রাখে খোদা গমা এবং
অতিরিক্ত খাবার খাওয়া রোধ করে কচুশাকে ফ্যাটের পরিমাণ নেই বললেই চলে তাই এটি
ডায়েট ফ্রেন্ডলি খাবার। তাই তার ওজন কমাতে চান বা ডায়েটে আছেন তারা কচু শাক
খেতে পারেন। কচু শাক পরিমাণ মত খান এবং সুস্থ লাইফ ইনজয় করুন।
আর যখন অন্যান্য খাবার খেতে খুব বেশি ইচ্ছা করবে না তখন স্বাভাবিকভাবেই আপনি পরিমাণে কম খাবেন। এভাবে কম খাওয়ার ফলে আপনার ওজন কমে যাবে। এছাড়াও কচু শাক খাওয়ার সময় আপনি যদি একটু বেশি করে খান তাহলে আপনার শরীরের ক্যালরি কম যোগ হবে এবং আপনার ওজন কমে যাবে। তবে ওজন কমানোর জন্য আপনাকে কচু শাক খাওয়ার পাশাপাশি নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে অথবা পরিশ্রম করতে হবে
কচু শাকের অপকারিতা
কচু শাকের অনেক পুষ্টি গুনাগুন রয়েছে। কচু শাকের পুষ্টি গুনাগুন এবং এর ভিটামিন এর কারনে শরীরে অনেক উপকার করে থাকেন।এটি শরীরে তেমন কোন ক্ষতি করে না। এর ক্ষতিকারক দিক তুলনামূলকভাবে অনেক কম। তাই বলা যায় এর অপকারীতার চাইতে এর উপকারিতা অনেক বেশি। চলুন জেনে নেয়া যাক এর কিছু অপকারিতা সম্পর্কে-
কচু শাক খেলে অনেকের গলা ধরে বা চুলকায়। কচুশাকে অক্সালেট নামক উপাদান রয়েছে যার কারণে এটি গলা চুলকায় বা গলা ধরতে সাহায্য করে। এর কারনে কচু শাক রান্না করার সময় এর সাথে লেবু রস বা টক জাতীয় কিছু মিশিয়ে রান্না করলে একটি গলা ধরে না বা গলা চুলকায় না।
আরো পড়ুনঃ কুকুর কামড়ালে কত দিনের মধ্যে জলাতঙ্ক হয় জানুন
যাদের শরীরে এলার্জির সমস্যা রয়েছে তারা কচু শাক খেলে একটু সমস্যা হতে পারে। কচু শাক খেলে সেসব রোগীদের শরীর চুলকায় বা শরীরের এলার্জির সমস্যা বেড়ে যাই। তাই তাদের ক্ষেত্রে কচু শাক খাওয়া থেকে একটু সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। অনেক ক্ষেত্রে কচু শাক না খাওয়া উচিত।
কচু শাকের আর একটি উপকারিতা হচ্ছে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা। যাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা রয়েছে তারা কচু শাক খেলে গ্যাসে অনেক সমস্যা করে। তাই তাদের কচু শাক খাওয়া থেকে বিরত থাকা ভালো না হলে পেটে অনেক সমস্যা হতে পারে।
শেষ কথাঃ কচু শাকের পুষ্টিগুন, উপকারিতা ও অপকারিতা
কচু শাক আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারি। কেননা এর অনেক পুষ্টি উপাদান রয়েছে। আজকের এই আর্টিকেলটি ছিল কচু শাকের উপকারিতা ও অপকারিতা এবং গর্ভাবস্থায় কচু শাকের উপকারিতা সম্পর্কে। অবশ্যই আপনারা আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পরে জানতে পেরেছেন কচু শাকের উপকারিতা ও অপকারিতা এবং গর্ভাবস্থায় কচু শাকের উপকারিতা সম্পর্কে। কচুর শাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও অন্যান্য উপাদান রয়েছে যা আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী।
আশা করি আজকের এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়েছেন এবং কচু শাক সম্পর্কে যেমন এর উপকারিতা অপকারিতা এবং এর পুষ্টি গুনাগুন বিষয়গুলো জানতে পেরেছেন। এ ধরনের আরো পোস্ট পড়তে চাইলে আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ভিজিট করুন এবং আমাদের সাথেই থাকুন এবং পোস্টটি যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। ধৈর্য সহকারে পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ।



ফকটেক ২৪ এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন
comment url