বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানোর নিয়ম
বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানোর নিয়ম অনেকেই জানেন না, সেই কারণে বাচ্চার পেট ফাঁপা, দুধ বমি করা এবং বাচ্চা কান্না করে। তাই আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানোর নিয়ম।
সদ্য ভূমিষ্ঠ হওয়া নবজাতক থেকে শুরু করে আড়াই বছর পর্যন্ত বাচ্চাকে মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে হয়।বড় বাচ্চাদের তুলনায় নবজাতকদের মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে একটু ঝামেলা পোহাতে হয়। কারণ নবজাতক দুধ খাওয়ার পর পরেই দুধ বমি করে, অনেক সময় পেট ফেপে থাকে। তাহলে চলুন দেরি না করে বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানোর নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানি।
পোস্ট সূচীপত্রঃবাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানোর নিয়ম
- বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানোর নিয়ম
- শিশুর মুখের সাথে স্তনের সংযুক্ত হওয়ার লক্ষণ
- আপনার সন্তানকে সঠিক অবস্থানে নিয়ে দুধ খাওয়ানো
- আপনার বাচ্চা দুধ পাচ্ছে কিনা বুঝবেন উপায়
- বসে দুধ খাওয়ানোর নিয়ম
- শুয়ে দুধ খাওয়ানোর নিয়ম
- বাচ্চাকে দুধ খাওয়ানোর সময় কি খাওয়া উচিত
- দুধ চেপে রেখে বাচ্চাকে খাওয়ানো
- শেষ কথাঃ বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানোর নিয়ম
বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানোর নিয়ম
বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানোর নিয়ম রয়েছে। সেই নিয়ম গুলো অনুসরণ করলে বাচ্চা
স্বস্তির সাথে দুধ খেতে পারবে এবং মায়েরও আনন্দ লাগবে। শিশু
জন্মের সাথে সাথে মায়ের বুকের শাল (কলস্ট্রাম) দুধ খাওয়াতে হবে। কারণ, শাল
দুধে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন রয়েছে।এই দুধ শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
এবং অত্যন্ত পুষ্টিকর। শিশুর জন্মের পর থেকে ছয় মাস পর্যন্ত শুধু মায়ের
বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। একে বলা হয় "এক্সক্লুসিভ ব্রেস্ট ফিল্ডিং"। ৬ মাসের পর
থেকে দুই বছর পর্যন্ত বুকের দুধের পাশাপাশি অন্যান্য খাবার শিশুর সামনে দিতে
হবে।
মা ও শিশু উভয়ের জন্য সঠিকভাবে বুকের দুধ খাওয়ানো নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বেশ কিছু অবস্থান নিয়ে আলোচনা করা হলো নিম্নে। মনে রাখবেন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আপনার সন্তান যেন ভালোভাবে মায়ের বুকের দুধ খেতে পারে। দুজনের জন্যই কোন অবস্থানটি সবচেয়ে ভালো সেটা বুঝতে হয়তো আপনার কয়েকবার চেষ্টা করা লাগবে। আপনার যদি কখনো শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো নিয়ে কোন প্রশ্ন বা উদ্বেগ থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার ধাত্রী (মিডওয়াইফ) বা ল্যাকটেশন বিশেষজ্ঞ সাথে যোগাযোগ করুন।
শিশুর মুখের সাথে স্তনের সংযুক্ত হওয়ার লক্ষণ
- আপনি যখন আপনার সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়াবেন তখন কোন ব্যথা অনুভব হবে না।
- আপনার সন্তানের মুখের ভিতরে স্তনের নিপুল(অ্যারিওলা) পুরোটাই মুখের ভিতরে থাকবে। বাহির থেকে দেখা যাবে না আর দেখা গেলেও, নিচের দিকে নয় উপরের দিকে দেখা যাবে।
- আপনার সন্তানের মুখ বড় করে হা করে স্তনের নিপুল মুখে নিবে।
- দুধ চোষার সময় নিচের ঠোঁট উল্টে থাকবে।
- ছোট বাচ্চার থুতনি আপনার স্তনের সাথে লেগে থাকবে নিচের দিকে।
আপনার সন্তানকে সঠিক অবস্থানে নিয়ে দুধ খাওয়ানো
আপনার সন্তানকে যখন কোলে নিবেন দুধ খাওয়ানোর জন্য তখন সরলরেখায় থাকবে। মাথা বাঁকানো বা মুছড়ানো থাকবে না। শিশুর মাথা বাঁকানো বা মোচড়ানো থাকলে শিশুর ঠিকমতো দুধ পাবে না।বাচ্চাকে দুধ খাওয়ানোর সময় কনুইয়ের ভাজে মাথা হাতের তালুতে পাছা মায়ের পেটের সাথে বাচ্চার পেট এবং বাচ্চার মুখে মায়ের স্তনের বোটা। এইভাবে বাচ্চাকে খাওয়ালে বাচ্চা সঠিক পরিমাপে দুধ পাবে।
আরো পড়ুনঃকৈশোর কালের বয়স সীমা কত
আপনার শিশুকে দুধ খাওয়ানোর সময় যত কাছাকাছি রাখবেন তত মা ও বাচ্চার মধ্যে বন্ডিং সৃষ্টি হবে এবং বাচ্চা ভালো দুধ পাবে।পিঠ বরাবর হাত রেখে শিশুর পুরো শরীরকে সামাল দিতে হবে। বিশেষ করে নবজাতক ও ছোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বড় শিশুদের ক্ষেত্রে শরীরের ওপরের অংশে সাপোর্ট দিলেও হয়।আপনার শিশুকে আপনার দিকে এনে তার নাক বরাবর আপনার বৃন্ত রাখুন। তারা সাধারণত স্তনবৃন্তের নিচ থেকে স্তনে মুখ দেয়।
আপনার বাচ্চা দুধ পাচ্ছে কিনা বুঝবেন উপায়
আপনার বাচ্চা দুধ পাচ্ছে কিনা কিভাবে বুঝবেন? বাচ্চা যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ দুধ পায় তাহলে চপাৎ চপাৎ শব্দ করবে এবং মাঝে মাঝে বিরতি দিবে।এক বা দুই বার দুধ চুষে নিয়ে শিশুকে ঢোক গিলতে শোনা যাবে।সন্তানের স্তন চুষে দুধ খাওয়াটা আপনার জন্য স্বস্তিদায়ক হবে, কোন ব্যাথা হবে না।আপনার সন্তান দুধ খাওয়া শেষ করে স্তন ছেড়ে দেবে এবং তাকে পরিতৃপ্ত, খুশি ও শান্ত দেখাবে।শিশুকে দুধ খাওয়ানোর পর আপনার স্তন হালকা লাগবে।
এতে আপনি ও আপনার সন্তান উভয়ই শান্তি ও আরাম বোধ করবেন।মায়ের শরীরের সঙ্গে শিশুর সংযুক্তি তার তাপমাত্রা, হৃদস্পন্দনের মাত্রা ও শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণ করে।এতে হজম শক্তি বেড়ে খাওয়ার প্রতি আগ্রহ তৈরি হবে।তাছাড়া এটা জীবাণু সংক্রমণের বিরুদ্ধে সুরক্ষায় সহায়তা করে।
বসে দুধ খাওয়ানোর নিয়ম
সদ্য ভূমিষ্ঠ হওয়া শিশুকে বসে দুধ খাওয়ানো উত্তম। জন্মের থেকেই দুধ খুঁজে
খাওয়ার ক্ষমতা রাখে নবজাতক। আপনি ঠিকমত যদি আপনার শিশুকে আপনার কোলের কাছে নিয়ে
স্তনের কাছাকাছি পৌঁছাতে পারেন তাহলে বাচ্চা নিজেই দুধ খাওয়ার জন্য হা করবে। যদি
বসে বাচ্চাকে দুধ খাওয়াতে চান তাহলে হাতল আছে এরকম চেয়ারে বসুন। যেন আপনার হাত
সাপোর্ট পায়। তাছাড়া আপনি বিছানায় বসে বাচ্চাকে দুধ খাওয়াতে চান
তাহলে সাপোর্ট হিসেবে বালিশ দিতে পারেন। বালিশের ওপর হাত রেখে বাচ্চাকে দুধ
খাওয়াতে পারেন।
বাচ্চাকে দুধ খাওয়ানোর সময় কনুইয়ের ভাজে মাথা হাতের তালুতে পাছা মায়ের পেটের সাথে বাচ্চার পেট এবং বাচ্চার মুখে মায়ের স্তনের বোটা। এইভাবে বাচ্চাকে খাওয়ালে বাচ্চা সঠিক পরিমাপে দুধ পাবে। আবার সদ্য ভূমিষ্ঠ হওয়া বাচ্চাকে দুধ খাওয়াতে হলে কনুইয়ের ভাজে মাথা না নিয়ে হাতের তালুর ওপর মাথা নিয়ে দুধ খাওয়াতে পারেন। এতে করে বাচ্চা সাপোর্ট পাবে। বড় বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এই টেকনিক অবলম্বন না করলেও হবে।
শুয়ে দুধ খাওয়ানোর নিয়ম
বাচ্চা যদি শুয়ে থেকে দুধ খেতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে তাহলে আপনি আপনার বাচ্চাকে শুয়ে থেকে দুধ খাওয়া। শুয়ে থেকে দুইভাবে বাচ্চাকে দুধ খাওয়ানো যায়।কাত হয়ে শুয়ে বাচ্চাকে আপনার দিকে ফিরিয়ে নিয়ে দুধ খাওয়াতে পারেন। আরেকভাবে হলো চিত হয়ে শুয়ে বাচ্চাকে আপনার বুকের উপর নিয়ে দুধ খাওয়াতে পারেন।মোট কথা হল বাচ্চা এবং আপনি যেভাবে স্বাচ্ছন্দ বোধ করবেন ঠিক সেইভাবে বাচ্চাকে খাওয়ান।
শুয়ে থেকে বাচ্চাকে দুধ খাওয়ালে এখানে অনেক উপকার পাওয়া যায়। বাহ্যিক উপকারের মধ্যে হল অনেক সময় বসে কোলে করে দুধ খাওয়ালে বাচ্চা ঘুমিয়ে যায় তখন শোয়াতে গেলে ঘুম ভেঙে যায়। শুয়ে থেকে দুধ খাওয়ালে বাচ্চা ঘুমিয়ে গেলেও শোয়ানোর ঝামেলা করা লাগেনা। এদিকে সন্তানের উসিলায় মায়ের একটু বিশ্রাম করা হয়।
বাচ্চাকে দুধ খাওয়ানোর সময় কি খাওয়া উচিত
বাচ্চাকে দুধ খাওয়ানোর সময় মায়ের পুষ্টিকর খাবার খাওয়া জরুরী। কেননা, মা যত পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার খাবে তত বাচ্চা দুধ পাবে। আসল কথা হল অক্সিটোসিন এবং প্রোলাক্টিং হরমোন নিঃসরণের ফলে মাতৃদুগ্ধ তৈরি হয়। এই হরমোন পর্যাপ্ত পরিমাণ পুষ্টিকর খাবার গ্রহণের ফলে বৃদ্ধি পায়। শিশু পাঁচ-ছয় মাস বয়সে অন্যান্য খাবার গ্রহণ শুরু করলেও দুই বছর বয়স পর্যন্ত মায়ের দুধ প্রয়োজন হয়। তাই বাচ্চাকে দুধ খাওয়ানোর সময় পুষ্টিকর খাবার খাওয়া উচিত।
তবে বাচ্চাকে দুধ খাওয়ানোর আগে এক গ্লাস পানি এবং দুধ খাওয়ানো শেষে এক গ্লাস পানি খেয়ে নিবেন। এতে করে আপনার শরীরের পানির ঘাটতি পূরণ হবে এবং অক্সিটোসিন এবং প্রলাক্টিন হরমোনের শিরা গুলো সচল রাখে। যাই হোক বাচ্চাকে দুধ খাওয়ানোর সময় মাকে অবশ্যই পুষ্টিকর খাবার, আয়রন সমৃদ্ধ খাবার, ভিটামিন যুক্ত খাবার খাওয়া উচিত।
দুধ চেপে রেখে বাচ্চাকে খাওয়ানো
বর্তমানে প্রায় বেশিভাগ মা আছেন যারা চাকরি করেন। গর্ভকালীন ছুটি পেলেও ছুটি শেষ
হওয়ার পর বাচ্চা রেখে আবার কাজে জয়েন করতে হয়। সেই দিক থেকে বাচ্চাকে বুকের
দুধ খাওয়ানো লং টাইম সময় লাগে। আপনি চাইলে দুধ চেপে রেখে বাচ্চাকে
খাওয়াতে পারেন। আপনি সকালে কাজে চলে গেলেন কিন্তু দুধ চেপে রেখে গেলেন এবং আপনার
আত্মীয় সেই দুধ বাচ্চাকে খাওয়াতে পারে কোন সমস্যা নেই।
চেপে বের করা দুধ অবশ্যই কাপে/চামচে করে শিশুকে খাওয়াবেন। বোতলে বা ফিডারে খাওয়ানো যাবেনা।সাধারণ তাপমাত্রায় এই দুধ ৬-৮ ঘন্টা এবং ফ্রিজে ২৪ ঘন্টা পর্যন্ত রাখা যায়।শিশুকে খাওয়ানোর পূর্বে দুধের পাত্র ঝাঁকিয়ে নেবেন। কেননা দুধ কিছুক্ষণ রেখে দিলে উপরে চর্বি ভাসতে থাকে।
শেষ কথাঃ বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানোর নিয়ম
প্রিয় পাঠক, আজকের এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানোর নিয়ম
নিয়ে আলোচনা করা হলো। মোট কথা হলো আপনি বাচ্চাকে যে এই অবস্থানে নেন না কেন
খেয়াল রাখবেন বাচ্চা ঠিকমতো দুধ পাচ্ছে কিনা। বাচ্চা যদি ঠিকমতো দুধ না পাই
তাহলে বাচ্চা কিন্তু কান্না করবে। তাই নবজাতকের ক্ষেত্রে দুধ খাওয়ানোর সময়
একটু বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে।
আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনার যদি ভালো লাগে তাহলে কমেন্ট করে জানাবেন। আপনার বক্তব্য আমাদের কাছে মূল্যবান। পোষ্টটি আপনার আত্মীয়ের সাথে শেয়ার করবেন। এতক্ষণ ধরে ধৈর্য সহকারে পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।


ফকটেক ২৪ এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন
comment url