দাঁতের ব্যথা কমানোর উপায় ১০টি ঘরোয়া টিপস
দাঁতের ব্যথা কমানোর উপায় সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? তাহলে আপনি সঠিক ওয়েবসাইটে এসেছেন। আজকে এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনাদের মাঝে তুলে ধরব দাঁতের ব্যথা কমানোর উপায় এবং কেন দাঁতে ব্যাথা হয় এই নিয়ে।
পোস্ট সূচিপত্রঃদাঁতের ব্যথা কমানোর উপায় ১০টি ঘরোয়া টিপস
- দাঁতের ব্যথা কমানোর উপায় ১০টি ঘরোয়া টিপস
- দাঁতের ব্যথা উপশমে ঘরোয়া টিপস
- দাঁতের ব্যথা নিয়ন্ত্রণের জন্য অতিরিক্ত দিকনির্দেশনা
- দাঁত ব্যথা হওয়ার কারণ
- কখন একজন দাঁতের ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত
- মন্তব্যঃদাঁতের ব্যথা কমানোর উপায় ১০টি ঘরোয়া টিপস
দাঁতের ব্যথা কমানোর উপায় ১০টি ঘরোয়া টিপস
দাঁতের ব্যথা একটি যন্ত্রণাদায়ক ও ব্যাঘাত মূলক হতে পারে। যা
আপনাকে দৈনন্দিন জীবনে কাজে মনোনিবেশ করা কঠিন করে তোলে। ৩২ টা দাঁতের মধ্যে
যেকোনো একটা দাঁত ব্যাথা হলেই কথা বলা, খাবার খাওয়া সমস্যা দেখা দেয়। আপনি মনে
করছেন যে, শুধু আপনার একার দাঁত ব্যথা তা কিন্তু নয়। এখন প্রায়ই মানুষের
দাঁতের সমস্যা হয়ে থাকে।
দাঁতের ব্যথা হওয়ার মূল কারণ হলো দাঁতের ভিতরে গহ্বর, মাড়ি ফোলা, পেরিও ডেন্টাল সংক্রমণ সমূহ দেখা দেয়। তাই দাঁত ব্যথা হয় বা করে। আর এই ব্যথা ক্রমাগত বৃদ্ধি পায়। অল্প ব্যাথা থেকে জোরালো ব্যথা শুরু হয়। কখনো কখনো এটি ফোলা এবং সংবেদনশীলতা হতে পারে। তবে এমন ছোট ছোট কথা আছে যা ডক্টরের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। ঘরে বসেই এই ব্যথা সারানো যায়। তবে ব্যথা বেশি হলে তো তাড়াতাড়ি সম্ভব ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।
দাঁতের ব্যথা উপশমে ঘরোয়া টিপস
দাঁতে ব্যাথা হলে তাৎক্ষণিক ডাক্তারের কাছে না গিয়ে ঘরোয়া জিনিসপত্র দিয়ে
ব্যথা কমানোর চেষ্টা করুন। এমন অনেক সময় ব্যথা হয় যা ডাক্তারের প্রয়োজন পড়ে
না। তাহলে চলুন আমরা ঘরোয়া উপায়ে কিভাবে দাঁতের ব্যথার উপশম করতে পারি সে
সম্পর্কে আলোচনা করি।
দাঁতের ব্যথা হলেই মনে হয় লবণ পানির কথা। দাঁতে ব্যথা হলে কুসুম গরম পানির সাথে
লবন মিশিয়ে কুলু কুচি করলে দাঁতের ব্যথা অনেকটা কম মনে হয়। এই পদ্ধতি
ব্যবহার করলে মুখের জীবাণু, ব্যাকটেরিয়া সৃষ্টি হওয়া বন্ধ হয়। এক গ্লাস পানিতে
এক চিমটি লবণ মিশিয়ে ৩০ থেকে ৪০ সেকেন্ড পানি মুখের মধ্যে নিয়ে
কুলুকুচি করতে হবে। এই প্রক্রিয়াটি দিনে দুই থেকে তিনবার করলে দাঁতের ব্যথা
উপশম হবে।
দাঁতের ব্যথা উপশম করতে লবঙ্গ অনেক উপকারী। কারণ প্রাচীনকাল থেকে লবঙ্গ দাঁতের ব্যথায় ব্যবহার হয়ে আসছে। লবঙ্গ আপনি দুই ভাবে ব্যবহার করতে পারেন। প্রথম হল লবঙ্গের তেল ব্যথা যুক্ত দাতে লাগাতে পারেন। এতে ব্যাথা ভালো হবে। তাছাড়া অনেকের বাড়িতে লবঙ্গের তেল থাকে না, তাই একটি লবঙ্গ ব্যথাযুক্ত দাঁতের উপরে রেখে চেপে ধরে রাখতে হবে। এতে লবঙ্গ রস দাঁতের গোড়ায় ঢুকে দাঁতের ব্যথা কমাবে।
আরো পড়ুনঃবাচ্চাদের কথা শেখানোর উপায় ৬টি কার্যকরী টিপস
হলুদ হল প্রদাহ প্রদাহ বিরোধী এবং প্রাকৃতিক অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন যা যা মুখে সংক্রমণ এবং ব্যথা সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করে। দাঁতের ব্যথা হলে বা মাড়ি ফুলে গেলে হাতের তালুতে এক চিমটি লবণ এবং এক চিমটি হলুদের গুঁড়া নিয়ে একসাথে ভালোভাবে মিশিয়ে ব্যথাযুক্ত দাঁতে বা মাড়িতে লাগাতে হবে। চেপে চেপে লাগাতে হবে এবং চুপ করে থাকতে হবে। এটি দুই থেকে তিনবার ব্যবহারের ফলে দাঁতের ব্যথা অনেকটা কমে যাবে।
দাঁতের ব্যথায় বরফের তুলনা হয় না। শুধু দাঁতের ব্যথা নয় যে কোন ব্যথায় বরফ বা
আইসপ্যাক লাগালে ব্যথা অনেক কমে যায়। যদি আপনার দাঁতে ব্যথা হয় তাহলে
আক্রান্ত স্থানে বা ব্যথা যুক্ত স্থানে বরফের মালিক দেন তাহলে ব্যথা কমে যাবে। এক
পাতলা টুকরো কাপড়ে এক টুকরো বরফ নিয়ে আপনার যে দাঁতে ব্যথা সেখানে গালের
উপরে ম্যাসাজ করুন। কিছুক্ষণ করুন দেখবেন ব্যথা আস্তে আস্তে কমে যাচ্ছে।
রসুন হলো প্রদাহ বিরোধী এবং প্রাকৃতিক অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন যা যা মুখে সংক্রমণ এবং ব্যথা সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করে।দাঁতের ব্যথা কমাতে বা দাঁত পরিষ্কার করতে রসুনের ঝুড়ি মেলা ভার। কারণ রসুন যেমন সাদা ঠিক সেইরকম দাঁতও সাদা করতে এবং রোগমুক্ত করতে অতুলনীয়। তাহলে চলুন রসুনের ব্যবহার জানি দাঁতের ক্ষেত্রে। এক থেকে দুই কোয়া রসুন নিয়ে বেটে নিন এবং এদের সামান্য পরিমাণ লবণ মিশিয়ে দাঁতে ঘসুন। ২-৩ দিন ব্যবহারে দাঁত পরিষ্কার হবে এবং দাঁতের ব্যথা কমে যাবে।
হলুদ প্রদাহ বিরোধী এবং প্রাকৃতিক অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন যা যা মুখে সংক্রমণ এবং ব্যথা সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করে। হলুদ এবং সরিষার তেল একত্রে দাঁতের ব্যবহার করলে দাঁতের ব্যথা কমে। কিভাবে ব্যবহার করবেন তা আলোচনা করা হলো। এক চিমটি হলুদ নিবেন এবং একটু সরিষার তেল নিয়ে হাতের তালুতে ভালোভাবে মিক্স করে নিবেন। তারপর ব্যথাযুক্ত হাতে হাতের আঙুলের সাহায্যে লাগিয়ে রাখবেন। ১-২ মিনিটের মতো লাগিয়ে রাখবেন। এটি অন্তত দিনে দুই থেকে তিনবার করলে দাঁতের ব্যথা কমে যাবে।
ভ্যানিলা নির্যাসে অ্যালকোহল রয়েছে যা দাঁতের ব্যথা অসার করে তুলে এবং সাময়িক ব্যথা উপশম করতে পারে। একটি তুলোতে ভ্যানিলা নির্যাসে ডুবিয়ে সরাসরি আক্রান্ত স্থানে বা ব্যথাযুক্ত স্থানে এবং মাড়িতে লাগিয়ে রাখুন। এটি কয়েক মিনিটের জন্য আক্রান্ত স্থানে রেখে দিন। ভালো ফলাফল পেতে দিনের কয়েকবার ব্যবহার করুন। দেখবেন আস্তে আস্তে ব্যথা কমে যাচ্ছে।
পেয়ারার পাতায় অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা দাঁতের ব্যথা উপশম করতে সাহায্য করে। মাউথওয়াশ তৈরি করতে তাজা পেয়ারা পাতা চিবিয়ে নিন বা পানিতে ফুটিয়ে নিন। থুতু ফেলার আগে পেয়ারা পাতার মাউথওয়াশ দিয়ে কয়েক মিনিট কুল্কুচি করুন। এটি দাঁতের ব্যথা থেকে সাময়িক উপশম দেয়।
নারকেল গাছের শেকড় দিয়ে দাঁত মাজলে দাঁতের গোড়া শক্ত হয় এবং ব্যাকটেরিয়া
ধ্বংস করে। এবং দাঁতের ব্যথা দূর করতে নারকেলের গাছের গোড়ার শেকড়
নিয়ে থেঁতো করে রস বের করুন। এবং ব্যথাযুক্ত স্থানে আস্তে আস্তে ঘুষতে
থাকুন। দেখবেন ব্যথা কমে গেছে।
দাঁতের ব্যথা নিয়ন্ত্রণের জন্য অতিরিক্ত দিকনির্দেশনা
- দাঁতের সমস্যা দূর করতে ফ্লোরাইড টুথপেস্ট এবং ফ্লশ দিয়ে সকাল বিকাল দাঁত ব্রাশ করুন।
- দাঁতের সংবেদনশীলতা বাড়াতে ঠান্ডা, গরম এবং মিষ্টি জাতীয় খাবার কম খাবেন।
- পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করুন। পানি মুখের ব্যাকটেরিয়া বা সংক্রমক দূরে রাখে।
- ধূমপান থেকে বিরত থাকুন।ধূমপান দাঁতের সমস্যা বাড়িয়ে তুলতে পারে এবং এটি নিরাময় থেকে অনেক দেরি হতে পারে।
দাঁত ব্যথা হওয়ার কারণ
প্রত্যেকটা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের যেমন গুরুত্বপূর্ণ ঠিক তেমনি দাঁতও একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাই কথায় আছে "দাঁত থাকতে দাঁতের মর্ম বুঝতে হবে"। এই কথার অনেক অর্থ প্রকাশ পেলেও আসলে দাঁত থাকতে দাঁতের যত্ন নিতে হবে। দাঁতের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে। তাহলে চলুন দাঁতের সমস্যা নিয়ে আলোচনা করি-
- দাঁতের ক্ষয় (গহ্বর): দাঁতের এনামেল নষ্ট হয়ে গেলে এবং ভেতরের স্নায়ু পর্যন্ত ক্ষয় পৌঁছালে তীব্র ব্যথা হতে পারে।
- মাড়ির রোগ: জিঞ্জিভাইটিস বা পিরিয়ডোন্টাইটিস এর মতো মাড়ির সংক্রমণ দাঁতে ব্যথার কারণ হতে পারে।
- দাঁত ভাঙা বা চিপস: দাঁতের কোনো অংশ ভেঙে গেলে বা ফেটে গেলে তা থেকে সংক্রমণ ও ব্যথা হতে পারে।
- দাঁতের সংবেদনশীলতা: দাঁতের শিকড় উন্মুক্ত হয়ে গেলে বা এনামেল পাতলা হয়ে গেলে ঠান্ডা, গরম বা মিষ্টি খাবারে তীব্র ব্যথা অনুভব হতে পারে।
- পেরিপিকাল বা পেরিওডন্টাল সংক্রমণ: দাঁতের গোড়ায় বা দাঁতের চারপাশের টিস্যুতে সংক্রমণ হলে ব্যথা হতে পারে।
- দাঁত পিষে যাওয়া: রাতে দাঁত ক্লেঞ্চ করলে বা পিষলে দাঁতের ব্যথা হতে পারে।
- প্যাকেট খুলতে বা শক্ত বস্তুতে কামড় দেওয়ার জন্য আপনার দাঁতকে যন্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা এড়িয়ে চলুন।
কখন একজন দাঁতের ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত
যদিও ঘরোয়া প্রতিকার দাঁতের ব্যথা থেকে সাময়িক মুক্তি দিতে পারে। তবে এর ব্যথা তীব্র হলে খুব তাড়াতাড়ি ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে হবে। তাহলে চলুন আলোচনা করি কখন একজন দাঁতের ডাক্তারের সাথে সাক্ষাৎ করা উচিত।
- ব্যথা তীব্র এবং অবিরাম।
- আক্রান্ত স্থান থেকে ফোলাভাব বা স্রাব হয়।
- আপনার জ্বর আছে অথবা সংক্রমণের লক্ষণ আছে।
- ঘরোয়া প্রতিকার কয়েকদিন পরে পর্যাপ্ত উপশম দেয় না।
- একজন দন্তচিকিৎসক আপনার দাঁত ব্যথার মূল কারণ নির্ণয় করতে পারেন এবং উপযুক্ত চিকিৎসার পরামর্শ দিতে পারেন, যার মধ্যে ফিলিং, রুট ক্যানেল থেরাপি বা নিষ্কাশনের মতো দাঁতের পদ্ধতি অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
মন্তব্যঃদাঁতের ব্যথা কমানোর উপায় ১০টি ঘরোয়া টিপস
দাঁতের ব্যথা খুবই কষ্টদায়ক একটি সমস্যা, তবে ঘরে বসেই কিছু সহজ উপায়ে ব্যথা অনেকটা কমানো যায়। লবণ-পানির কুলকুচি, লবঙ্গ তেল ব্যবহার, রসুন বা পেয়াজের রস লাগানো, বরফের সেঁক, পুদিনা পাতা চিবানো এসব ঘরোয়া টিপস দাঁতের ব্যথা কমাতে বেশ কার্যকর। তবে ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হলে অবশ্যই দন্তচিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
প্রিয় পাঠক, আজকে আর্টিকেলের মাধ্যমে দাঁতের ব্যথা কমানোর উপায় ১০টি ঘরোয়া টিপস সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। এই আর্টিকেলটি পড়ে দাঁতের ব্যথা সাময়িকভাবে কমাতে পারবেন। তবে ব্যথা যদি বেশি হয় তাহলে তাড়াতাড়ি ডেন্টেস এর সাথে পরামর্শ নিতে হবে। আর্টিকেলটি পড়ে আ আপনাদের যদি কোন উপকারে আসে তাহলে আমারে লেখাটি স্বার্থক।
যদি পোস্টটি পড়ে ভালো লাগে তাহলে কমেন্ট করে জানাবেন। এবং আপনার পরিবারের সদস্যদের সাথে এবং আপনাদের বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। এবং আমাদের নতুন নতুন পোস্ট পেতে পেজটি সাবস্ক্রাইব করবেন। এতক্ষণ ধরে আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ।


ফকটেক ২৪ এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন
comment url