শিম চাষের উপযুক্ত সময় এবং শিম চাষে মাটির বৈশিষ্ট্য
শিম চাষের উপযুক্ত সময় এবং সিম চাষে মাটির বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে না জানার কারণে অনেকেই দ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকেন। আর নয় দ্বিধাদ্বন্দ্ব আর নয় অজানা আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন শিম চাষের উপযুক্ত সময় এবং সিম চাষে মাটির বৈশিষ্ট্য।
শিম একটি লতানো সবজি। শিম গাছ উপরে মাদার উপরে হয়ে থাকে এবংশিম করলা, লাউ, পটল , ঝিঙে মত নিচের দিকে ঝুলে থাকে।শিম সবার কাছে পছন্দের একটি সবজি। তাহলে চলুন দেরি না করে, শিম চাষের উপযুক্ত সময় নিয়ে আলোচনা করি-
পোস্ট সূচীপত্রঃশিম চাষের উপযুক্ত সময় এবং শিম চাষে মাটির বৈশিষ্ট্য
- শিম চাষের উপযুক্ত সময়
- শিম চাষের জন্য মাটির বৈশিষ্ট্য
- শিম চাষের জন্য জলবায়ু
- শিমের চাষের জন্য জমি প্রস্তুতকরণ
- শিমের বীজ শোধন
- শিমের বীজ রোপণ পদ্ধতি
- শিম চাষের জন্য জমির বেড তৈরি
- শিম গাছে মাচা প্রদান
- শিম গাছে সার প্রয়োগ
- শিম গাছের আগাছা পরিস্কার
- টবে শিম চাষ পদ্ধতি
- শেষ কথাঃশিম চাষের উপযুক্ত সময় এবং শিম চাষে মাটির বৈশিষ্ট্য
শিম চাষের উপযুক্ত সময়
শিম একটি শীতকালীন সবজি। শিমের তরকারি সেই রকম টেস্ট। শিমের ভাজি পছন্দ করেন না
এমন কোন মানুষ পাওয়া যাবে না। শুধু ভাজি কেন চরচরি, শিম দিয়ে মাছের তরকারি
যেভাবে খান না কেন শিমের টেস্ট অতুলনীয়। অনেকেই শিম ভাজি রুটি বা গরম ভাতের
সাথে খেতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। আবার শিমের বিচি খেতেও অসাধারণ। আমি ছোটবেলায়
শিমের ভাজি খাওয়ার সময় শিমের বিচি গুলো আলাদা করে রাখতাম পরে খাওয়ার জন্য।
হয়তো আমার মত এরকম অনেকেই করেন আপনারা। তাহলে চলুন এতো স্বাদের সবজি চাষের
উপযুক্ত সময় জানা যাক-
আরো পড়ুনঃসরিষা চাষের উপযুক্ত সময় এবং সরিষা চাষে মাটির বৈশিষ্ট্য
শিম চাষে উপযুক্ত সময় নির্বাচন করা অত্যন্ত জরুরী। কেননা উপযুক্ত সময়ে শিম
গাছ না লাগালে ভালো ফলনের আশা করা যায় না।শিম চাষের উপযুক্ত সময় হল আষাঢ় থেকে
ভাদ্র মাস(মধ্য জুন থেকে মধ্য সেপ্টেম্বর) সঠিক সময়। কৃত্রিম উপায়ে সারা
বছর শিম চাষ করা যায়। তবে শীতকালের কুয়াশার চাদরে ঢেকে শিমের ফুল ও ফল আস্তে
আস্তে বড় হয়।
শিম চাষের জন্য মাটির বৈশিষ্ট্য
শিম চাষের জন্য মাটির গুনাগুন ও বৈশিষ্ট্যের ওপর নির্ভর করে ভালো ফলন ঘরে তোলা যায়।প্রায় সব ধরনের মাটিতে শিম চাষ করা যায়। তবে দো-আঁশ ও বেলে দোআঁশ মাটিতে এর ফলন সবেচেয়ে ভালো হয়।পানি নিষ্কাশিত উঁচু জমিতে শিম চাষ ভালো হয়। বাণিজ্যিকভাবে করলা চাষ করা যেতে পারে এবং বাড়িতে টবে ছাদবাগান হিসেবে করলা চাষ করতে।
শিম চাষের জন্য জলবায়ু
শিম চাষের জন্য শুষ্ক এবং আদ্র আবহাওয়া সবচেয়ে উত্তম। যেখানে তাপমাত্রা ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে। ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এর বেশি তাপমাত্রা হলে ফুল ঝরে পড়ে এবং ফলন কমে যায়। তাই, বাংলাদেশে সাধারণত রবি মৌসুমে, অর্থাৎ অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর মাসের মধ্যে শিম চাষ করা হয়। যত বেশি কুয়াশা থাকবে তত বেশি শিমের ফুল এবং ফল ভালো হয়।
শিমের চাষের জন্য জমি প্রস্তুতকরণ
শিম চাষ করতে হলে প্রথমে জমি চাষ দিয়ে নিতে হবে। কমপক্ষে ৪-৫ টা চাষ দিয়ে জমি থেকে আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। জমির মাটি যদি ঢিলাযুক্ত হয় তাহলে মই দিয়ে মাটিগুলো ঝুরঝুরা করে নিতে হবে। চারা রোপনের ১০-১২ দিন পূর্বে জমি চাষ করে প্রখর রোদে ফেলে রাখতে হবে। এতে করে জমিতে থাকা পোকামাকড় পাখি অথবা সূর্যের তাপে মরে যাবে। তবে জমিকে বেড আকারে শিমের বীজ লাগাতে হবে।জমি চাষ দেওয়ার পূর্বে আপনি গোবর, ছাই, কম্পোস্ট সার এবং ইউরিয়া দিতে পারেন। এতে করে মাটি উর্বর হবে আর ফলন ভালো আসবে।
শিমের বীজ শোধন
বীজ রোপণের আগে বীজ শোধন করে নেওয়া জরুরী। কারণ অনেক বীজ বাহিত রোগ থাকে যা ফলন কমায়। তাই বীজ বাহিত রোগ থেকে মুক্তি পেতে বীজ শোধন করা জরুরী।বীজ বপনের পূর্বে ভিটাভেক্স-২০০ অথবা ক্যান্টন দিয়ে (২-৩ গ্রাম ছত্রাক নাশক/ কেজি বীজ) বীজ শোধন করে বপন করতে হবে৷ বিনা শিমের বীজ ব্যাভিষ্টিন (২.৫ গ্রাম/ কেজি) বা বেনলেট (১.৫ গ্রাম/ কেজি) দিয়ে শোধন করতে হবে৷
আরো পড়ুনঃবেগুন চাষের উপযুক্ত সময় এবং বেগুন চাষের মাটির বৈশিষ্ট্য
শিমের বীজ রোপণ পদ্ধতি
বীজ বপনের আগের রাতে শিমের বীজ ঘরের স্বাভাবিক তাপমাত্রার ১০-১২ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখুন। এতে অঙ্কুরোদগম দ্রুত হবে। তবে, বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা থাকলে বীজ না ভিজিয়ে সরাসরি রোপণ করতে পারেন, কারণ অতিরিক্ত ভেজা থাকলে বীজ পচে যেতে পারে।জমি তৈরির পর নির্দিষ্ট মাপে উঁচু বেড তৈরি করে একক বা দ্বৈত সারি পদ্ধতিতে নির্দিষ্ট দূরত্বে গর্ত তৈরি করুন। এরপর প্রতি গর্তে ২-৩টি বীজ বপন করুন।
দেশী শিম প্রধাণত মাদা প্রথায় বসতবাড়ির আশপাশে, পুকুরপাড়ে, পথের ধারে ও জমির আইলে চাষ করা হয়। তবে সারি করে চাষ করা হলে ১ মিটার দূরত্বে সারি করে প্রতি সারিতে ৫০ সেমি পর পর ৪৫ সেমি লম্বা, ৪৫ সেমি চওড়া ও ৪৫ সেমি গভীর করে মাদা তৈরি করতে হয়। তারপর প্রতি মাদার মাটির সাথে ১০ কেজি পচা গোবর, ১৫০ গ্রাম টিএসপি ও ১০০ গ্রাম এমওপি সার ভালোভাবে মিশিয়ে মাদা ভরাট করতে হবে। বীজ বপনকালে বর্ষা থাকে, তাই মাদায় যাতে পানি না জমে সে জন্য জমির সাধারণ সমতল হতে মাদার ভরাট মাটি ৫ সেমি পরিমাণ উঁচু রাখতে হয়।শিম চাষের জন্য জমির বেড তৈরি
শিম চাষ করতে হলে প্রথমে আপনাকে জমি আকারে তৈরি করে নিতে হবে। কারণ বেড আকারে শিম লাগালে ফলন যেমন ভালো হয় ঠিক তেমনি এর পরিচর্যাও অনেক ভালোভাবে করা যায়। তাহলে চলুন শিম চাষের জন্য বেড তৈরি করা শিখি।শিম চাষ মূলত বেড আকারে করা হয়। প্রতিটি বেডের দৈর্ঘ্য জমির পরিমাণ অনুযায়ী হতে পারে। প্রস্থ 1.5 মিটার।
বেডের উচ্চতা 25 থেকে 30 সেন্টিমিটার এবং দুই বেডের মাঝখানে ৫০-৬০ সেন্টিমিটার নালা রাখতে হবে কারণ জমিতে সেচ দেওয়ার সময় অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশনের জন্য। প্রতিটি বেডে ২৫- ৩০ সেন্টিমিটার দূরত্বে বীজ বপন করতে হবে। এবং প্রত্যেকটি গর্তে ২-৩ টি করে বীজ রোপন করতে হবে।
শিম গাছে মাচা প্রদান
লতানো গাছে মাচা দেওয়া আবশ্যক। মাচা দিলে ফলঝুলে থাকে এবং ফলের পচার হাত থেকে রক্ষা পায়।চারা লাগানোর ১৫–২০ দিন পর, যখন গাছ লতানো শুরু করে, তখনই মাচা দিতে হবে।খুঁটিগুলো ৫–৬ ফুট দূরত্বে বসান।খুঁটির ওপর অংশে দড়ি টেনে একে অপরের সাথে যুক্ত করুন।উপরে আড়াআড়ি দড়ি বা জাল টানুন যেন লতা উপরে উঠে ছড়িয়ে যেতে পারে।
শিমগাছ বাওয়ার সুযোগ যত বেশি পায়, ফলন তত বেশি হয়। তাই শিমগাছ যখন ১৫-২০ সেমি লম্বা হবে তখন গাছের গোড়ার পাশে বাঁশের ডগা (কঞ্চিসহ) মাটিতে পুঁতে দিতে হবে। এ ঝড়ে শিমগাছ ছড়িয়ে পড়ে ভালো ফুল ও ফল দিতে পারে। দেশীয় পদ্ধতিতেও বাঁশের মাচা বা ঝিকাগাছে অথবা ছনের ঘরের চালে শিমগাছ তুলে দেয়া যায়। এ ছাড়া বাঁশের চটা ও কঞ্চির সাহায্যে ইংরেজি ‘অ’ অরের মতো কাঠামো তৈরি করে জমিতে মাচা দিয়েও শিমগাছ থেকে ভালো ফলন পাওয়া যায়।শিম গাছে সার প্রয়োগ
শিমের জমিতে সার উপরি প্রয়োগের কাজ দুই কিস্তিতে করতে হয়। প্রথম কিস্তি চারা গজানোর এক মাস পর এবং দ্বিতীয় কিস্তি গাছে দুই-চারটি ফুল ধরার সময়। প্রতি কিস্তিতে মাদা প্রতি ২৫ গ্রাম ইউরিয়া ও ২৫ গ্রাম এমওপি সার গাছের গোড়ার চারদিকে (গোড়া থেকে ১০-১৫ সেমি দূরে) উপরি প্রয়োগ করে মাটির সাথে ভালো ভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। সার প্রয়োগের সময় মাটিতে রসের অভাব হলে ঝাঁঝরি দিয়ে পানি সেচ দিতে হবে।
শিম গাছের আগাছা পরিস্কার
শিমের চারা ও তার আশপাশের আগাছা নিড়ানি দিয়ে নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। তা ছাড়া মাঝে মধ্যে নিড়ানি দিয়ে চারার গোড়ার মাটি খুঁচিয়ে আলগা ও ঝুরঝুরে করে রাখতে হবে। শিমের খরা সহ্য করার মতা থাকলেও বৃষ্টির অভাবে মাটিতে রসের ঘাটতি হলে পানি সেচ দিতে হবে।
টবে শিম চাষ পদ্ধতি
অনেকেই শখের বসে ছাদবাগান হিসেবে শিম চাষ করে থাকেন। ছাদের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি পরিবারের চাহিদা পূরণ হয়। মাটিতে যেভাবে শিম চাষ করা হয় ঠিক অনুরূপভাবে টবেও চাষ করা হয়। টব বলতে আমরা বুঝে থাকি বস্তা, প্লাস্টিকের ডাম এবং শক্ত পলিব্যাগ। বীজের উপর নির্ভর করে আপনাকে টব নিতে হবে। এবং টবের নিচে ২-৩ টা ছিদ্র রাখতে হবে যেন অতিরিক্ত পানি টবের ভেতরে যেন পানি জমে না থাকে।
আপনি জমিতে অথবা টবে যেখানে বীজ বপন করেন না কেন তার আগে ২৪ ঘন্টা বীজগুলো ভিজিয়ে রাখতে হবে। এতে অঙ্কুরোদগম ভালো হয়। টবে যেকোনো ধরনের বীজ বপন করতে পারেন। চারা রোপনের পূর্বে টবে মাটি ভর্তি করে নিতে হবে। মাটি, ছাই, গোবর, কম্পোস্ট সার এবং জৈব সার মিশিয়ে নিতে হবে।
তারপর টবটি মধ্যে ভর্তি করে তার ভিতরে বীজ রোপন করে দিতে হবে। তারপর প্রতিটি টবে দুইটি করে বীজ বপন করে দিন। ১০ থেকে ১৫ দিন পর সবল চারা রেখে দুর্বল চারা উঠিয়ে ফেলুন। টবে আপনি চাইলে ডিমের খোসা, যেকোনো সবজির খোসা অথবা মাছ-মাংস ধোয়া পানি দিতে পারেন। এতে গাছের বৃদ্ধি ভালো হবে এবং ফল ফুল তাড়াতাড়ি ধরবে।
শেষ কথাঃশিম চাষের উপযুক্ত সময় এবং শিম চাষে মাটির বৈশিষ্ট্য
প্রিয় পাঠক, আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে শিম চাষের উপযুক্ত সময় এবং শিম চাষে মাটির বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। অবশ্যই আর্টিকেল পড়ে আপনারা শিম চাষের প্রয়োজনীয় সবকিছু বুঝতে পেরেছেন। তবে একটা কথা না বললেই নয় সেটা হলো সবকিছুরই যত্ন লাগে। কথায় আছে যত্ন করলে রত্ন মিলবে। তাই সঠিক পরিচর্যা ও যত্ন করে শিম চাষ করে অধিক ফলন ঘরে তোলে আর্থিক লাভবান হন।
পোস্টটি ধৈর্য সহকারে পড়ার জন্য ধন্যবাদ। পোস্টটি পড়ে যদি আপনার ভালো লাগে তাহলে কমেন্ট করবেন। আমাদের নতুন নতুন পোস্ট পেতে ওয়েবসাইটটি সাবস্ক্রাইব করে পাশে থাকা বেল আইকনটি ক্লিক করে আমাদের পাশে থাকবেন। ধন্যবাদ।


ফকটেক ২৪ এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন
comment url